রাধারানীর আবির্ভাব তিথি (Radha Ashtami) - তারিখ, ইতিহাস ও পূজা বিধি

রাধারানীর আবির্ভাব তিথি সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ থাকলেও আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মাঝে সেই সকল মতবাদ গুলোর মধ্যে যেগুলো গ্রহণযোগ্য তা তুলে ধরার জন্য। 

শ্রীমতি রাধারানীর আবির্ভাব তিথি, যাকে আমরা সকলেই রাধা অষ্টমী নামে জানি, বৈষ্ণব ধর্মীয় পরম্পরায় এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন হল রাধা অষ্টমীর দিন। এটি মূলত ভাদ্র মাসে শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। ভাদ্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথিতে, নন্দগাঁওয়ের পাশে বর্ষাণা নামক গ্রামে, রাজা বৃ্ষভানু ও রানী কীর্তিদার কন্যা রূপে শ্রীরাধারানি আবির্ভূত হন পৃথিবীতে। শাস্ত্র অনুসারে, তিনি শ্রীকৃষ্ণের আনন্দশক্তির (হ্লাদিনী শক্তি) সরূপা, ভক্তি ও প্রেমের সর্বোচ্চ প্রকাশ বলে ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। তাঁর আবির্ভাব দিনটিতে ভক্তরা উপবাস পালন করেন, শ্রীরাধার পাদপদ্মে পূজা ও অর্চনা করেন এবং হরিনাম সংকীর্তনে অংশগ্রহণ করে এই দিবস উদযাপন করেন যাতে পৃথিবী ও মানুষের মঙ্গল হয়। আপনারা হয়তো সকলেই জানেন, রাধারানীর কৃপা ছাড়া শ্রীকৃষ্ণভক্তি লাভ করা দুষ্কর অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের দেখা পাওয়া যায় না, আর এমনটাই বিশ্বাস ও লেখা রয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে। তাই রাধাষ্টমীর দিনে ভক্তরা শ্রীমতী রাধারানীর চরণে নিজেকে সমর্পণ করে শুদ্ধ ভক্তির জন্য প্রার্থনা করেন যাতে তার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের ও আশীর্বাদ মিলে। বৃন্দাবনের রাধারাণী মন্দির, বিশেষত বর্ষাণা ধামে এই তিথিতে বিশাল উৎসব হয়, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমবেত হন রাধা রানীর অপার মহিমা শ্রবণ ও স্মরণ এবং তার কৃপা লাভ করতে।

রাধাষ্টমী hd
রাধাষ্টমী

রাধারানীর আবির্ভাব তিথি (Radha Ashtami)

আজ রাধারানীর বিশেষ দিন এই দিনটিকে বলা হয় রাধাষ্টমী , তাই সকলকে অগ্রিম রাধাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে রাধারানী আবার আবির্ভাব তিথি সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। লীলাময় কৃষ্ণ সত্যিই অসাধারণ, তাঁর মধ্যে অসীম ভালোবাসা ও শক্তি ভরপুর। আমরা কমবেশি সকলেই জানি  কৃষ্ণের শক্তি সবকিছুর উৎস। যেমন হল সৃষ্টির শক্তি, ইচ্ছার শক্তি, জীবনের শক্তি আর মায়ার শক্তি। বৈকুণ্ঠে শ্রী যোগমায়া আর অন্যান্য অনেক শক্তি আছে। গোলকদণ্ডের সব কাজ শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ শক্তির মাধ্যমে হয়। 

ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত — সন্ধিনী, সম্বিৎ ও হ্লাদিনী। সন্ধিনী শক্তির দ্বারা সমগ্র চিন্ময় জগতের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্বিৎ শক্তি, যা জ্ঞানশক্তি নামে পরিচিত, তার মাধ্যমে শ্রীভগবান নিজেকে উপলব্ধি করেন এবং ভক্তরাও এই শক্তির সহায়তায় শ্রীকৃষ্ণকে জ্ঞানে ও হৃদয়ে অনুভব করতে সক্ষম হন। আর হ্লাদিনী শক্তির মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ দিব্য আনন্দ ও প্রেমাস্বাদন করেন।

এই হ্লাদিনী শক্তির সর্বোচ্চ প্রকাশ শ্রীমতি রাধারানী। ব্রজের সকল গোপীকাই রূপে, গুণে ও ভাববিহারে অতুলনীয়া, কারণ তাঁরা কেউই সাধারণ মায়াবদ্ধ জীব নন—তাঁরা হলেন শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তির কায়ব্যুহ স্বরূপ। সুতরাং তাঁদের জন্ম মায়িক জগতে ঘটে না; বরং তাঁরা অনাদি কাল ধরে চিন্ময় ধাম গোলোকবৃন্দাবনে অবস্থান করছেন এবং শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে লীলাসঙ্গ করে কৃষ্ণপ্রেমে তৃপ্ত হচ্ছেন।

যখন ব্রহ্মার এক দিবসে শ্রীকৃষ্ণ ভৌম বৃন্দাবনে অবতরণ করেন, তখন তাঁর হ্লাদিনী শক্তি, শ্রীমতি রাধারানী সহ সকল সখীগণ, তাঁদের চিরস্থায়ী চিন্ময় রূপেই এই জগতে আবির্ভূত হন, যেন আমাদের মতো জন্মগ্রহণ করেছেন। যদিও তাঁদের আবির্ভাব দিব্য এবং আত্মজ শাশ্বত, তথাপি তাঁরা মায়াবদ্ধ জীবের চক্ষে জন্মলীলা প্রকাশ করেন—শুধু আমাদের মতো পতিত জীবদের প্রতি করুণার জন্যই।

আসলে শ্রীমতী রাধারানীর জন্ম ও কার্যকলাপ সবই দিব্য ও অপ্রাকৃত প্রকৃতির। পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডে শিব-পার্বতী সংলাপে আমরা ভৌম বৃন্দাবনে রাধার আবির্ভাব সম্বন্ধে একটি অপূর্ব বিবরণ পাই।বৃন্দাবনে বাস করতেন এক পরম ভাগবত রাজা, নাম তাঁর বৃষভানু। তাঁর পত্নী ছিলেন কীর্তিদা সুন্দরী—এক আদর্শ পতিপ্রাণা নারী। কীর্তিদা দেবীর গর্ভে, ভাদ্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথির মধ্যাহ্ন লগ্নে, এক শুভ মুহূর্তে জন্মগ্রহণ করেন দেবী স্বরূপা শ্রীমতী রাধারাণী।

এই কন্যার আবির্ভাবে সমগ্র বৃন্দাবনভূমি পরিপূর্ণ হয় দিব্য আনন্দে। সকলেই কন্যার রূপ-মাধুর্যে অভিভূত হয়ে পড়েন, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়—তিনি চোখ মেলেননি। ফলে অনেকেই ধারণা করেন, তিনি হয়তো দৃষ্টিহীন। তবে এই চক্ষু নিমীলনের রহস্য একান্তই আধ্যাত্মিক।

কারণ, গোলোক ধামে একদিন শ্রীকৃষ্ণ রাধারাণীকে পূর্ববতী ইঙ্গিত দেন যে তিনি শীঘ্রই ধরাধামে অবতরণ করবেন, যেখানে তাঁদের প্রেম ও লীলার অতুল মাধুর্য প্রকাশিত হবে। তখন রাধারাণী সিদ্ধান্ত নেন—তিনি কেবল সেই মুহূর্তেই চোখ মেলবেন, যখন ভৌম বৃন্দাবনে প্রথমবারের মতো শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করবেন।

শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে রাধারানী এক যুক্তিসম্মত প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বললেন, “যদি আমাকে পৃথিবীতে অবতরণ করতে হয়, তবে সেখানে আমাকে পরপুরুষদের মুখ দর্শন করতে হবে। অথচ আমি চিরকাল কেবল তোমারই রূপমাধুরী দর্শন করি। অন্য কারও মুখপানে চাওয়ার অভ্যাস বা আগ্রহ আমার নেই। সে ক্ষেত্রে মর্ত্যে আমার আবির্ভাব কি করে সম্ভব?”

রাধারানীর এই কৌতুকপূর্ণ অথচ গভীর যুক্তিপূর্ণ কথায় শ্রীকৃষ্ণ মৃদু হেসে বলেন, “এ নিয়ে তোমার বিন্দুমাত্র চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। তুমি যেখানে থাকবে, যেদিকে চাও—সর্বত্রই আমাকেই দেখতে পাবে। আমি সর্বদা তোমার দৃষ্টিসীমায় বিরাজ করব।” এই আশ্বাসেই আশ্বস্ত হয়ে, হরিপ্রিয়া শ্রীমতী রাধারাণী মর্ত্যধামে অবতরণে সম্মত হন।

প্রকৃতপক্ষে, জড়জগতের বৃন্দাবনধাম ও চিন্ময় জগতের শ্রেষ্ঠলোক গোলোক বৃন্দাবনের মধ্যে আদৌ কোনো প্রভেদ নেই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছায় গোলোকধাম জড়জগতে বৃন্দাবনেরূপে আত্মপ্রকাশ করে। যখন শ্রীকৃষ্ণ মর্ত্যে অবতরণ করেন, তখন তিনি একা আসেন না—তিনি তাঁর নিত্য পার্ষদবৃন্দ ও চিন্ময় ধামসহ আবির্ভূত হন। তাঁর এই লীলাসজ্জা সম্পূর্ণই দিব্য এবং আধ্যাত্মিক।

কিন্তু মায়াবদ্ধ জীবেরা—যারা জড়-বুদ্ধিতে আবদ্ধ, তারা এই ধামগুলিকে জড় বিশ্বেরই এক-একটি সাধারণ স্থান বলে মনে করে। তারা বৃন্দাবন, নবদ্বীপ, জগন্নাথ ধাম প্রভৃতিকে কেবলমাত্র ভৌগোলিক স্থান হিসেবে দেখে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সকল ধাম ভগবানের চিন্ময় রাজ্যের অঙ্গ—তাঁর লীলার মঞ্চ। আর যেহেতু ধাম স্বয়ং ভগবানের প্রকাশ, তাই মায়াবদ্ধ জীব ধামের পবিত্রতাকে কোনোভাবেই কলুষিত করতে পারে না।

যারা ধামে এসে পাপকর্মে লিপ্ত হয়, প্রকৃতপক্ষে তাদের সেই কর্মধারা ধামের অন্তর্মুখী চিন্ময় সত্তায় প্রবেশ করতে পারে না। তাদের কার্যকলাপ ধামের উপর আরোপিত মায়ার আবরণের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে—যেমন কেউ গভীর সাগরে না গিয়ে কেবল তরঙ্গের উপরেই ভেসে বেড়ায়।শুধুমাত্র সদ্‌গুরুর কৃপা এবং ভক্তির দ্বারা যখন সেই মায়িক আবরণ সরে যায়, তখনই ধামের প্রকৃত, চিন্ময় রূপ উপলব্ধি স ম্ভব হয়। 

এইদিকে শ্রীমতী রাধারানীর শুভ আবির্ভাব তিথিতে মহোৎসবের আমন্ত্রণ পেয়ে নন্দ মহারাজ, যশোদা দেবী ও শ্রীকৃষ্ণসহ উপস্থিত হন বৃষভানু রাজার রাজপ্রাসাদে। সকলের মধ্যে আনন্দের উচ্ছ্বাস বইতে থাকে। নন্দ মহারাজ ও বৃষভানু রাজা একে অপরকে আলিঙ্গন করে আত্মীয়সুলভ প্রেম প্রকাশ করেন।

এই আনন্দময় পরিবেশে, এক নিরিবিলি মুহূর্তে, শ্রীকৃষ্ণ গোপনে প্রবেশ করেন অন্তঃপুরে, যেখানে শিশুরূপা রাধারানী শয়ন করছেন। তিনি এসে দাঁড়ান রাধার পালঙ্কের পাশে। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটে এক অপার্থিব দৃশ্য। শ্রীমতী রাধারাণী ধীরে ধীরে চোখ মেলে প্রথমবারের মতো চেয়ে দেখেন শ্রীকৃষ্ণকে। এই চরণপূত দৃষ্টির মিলনে—দুই অনন্ত আত্মা এক অপূর্ব দিব্য-আনন্দে নিমজ্জিত হন। ইতিমধ্যে বৃষভানু রাজা অন্তঃপুরে প্রবেশ করে এই অলৌকিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। তিনি দেখলেন, তাঁর কন্যা রাধারাণী চোখ মেলে কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে আছেন। আনন্দ ও বিস্ময়ে আপ্লুত হয়ে তিনি কৃষ্ণ ও রাধাকে কোলের মধ্যে তুলে নেন এবং হৃদয়ে অনুভব করেন—এই চক্ষু উন্মীলনের পেছনে কৃষ্ণই হচ্ছেন দিব্য চক্ষুদাতা।

রাধার চক্ষু উন্মীলনের এই অলৌকিক সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই সমগ্র ব্রজভূমিতে উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়। ব্রজবাসীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন, এবং এই দিনটি পরিণত হয় এক চিরস্মরণীয়, শুভ ও পবিত্র দিবসে—যা পরবর্তীকালে রাধাষ্টমী মহোৎসব নামে প্রতিষ্ঠা পায়।


আসুন জেনে নেই এই রাধাষ্টমী_ব্রত_মাহাত্ম্য


 রাধাষ্টমী ব্রত পালন করা মানে সত্যিই একটা বিশেষ ব্যাপার। একবার এই ব্রত করলে, এর ফল কি যে কতটা লাভজনক তা সত্যিই খবর রাখার মতো। প্রাচীনকাল থেকেই শোনা যায় যে, একাদশী ব্রত পালন করলেই ফল পাওয়া যায়। আর রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার ফল হয় একশো গুণ বেশি। এটা যেন এক রকমের দারুণ সুযোগ, যা সবারই করা উচিত। 


পালন করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা লাগে এবং কিছু রীতিনীতি পালন করা হয়। তা না হলে ফল পাওয়ার আশা করা ঠিক হবে না। এই ব্রত পালন করলে বিশ্বাসীরা মনে করেন, জীবনে সুখ-শান্তি এবং ভালো ফল আসবে। কারণ, এটা শুধু একটা ধর্মীয় কাজ নয়, বরং জীবনের অনেক কিছুই এতে জড়িত থাকে। 


১। যারা রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন, তাদের কোটি কোটি ব্রহ্মহত্যার পাপ ক্ষুণ্ন হয়।


২।  একবার রাধাষ্টমী পালন করলে একাদশী পালন করার চেয়ে অনেক বেশি ফল পাওয়া যায়।


৩। পর্বতসমান সোনা দান করার ফলের থেকেও রাধাষ্টমী ব্রত পালন একশো গুণ অধিক ফলদায়ক।


৪। সহস্র কন্যাদানের সুফল লাভ হয় একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে।


৫।  গঙ্গাসহ সকল পবিত্র তীর্থের তীর্থফল অর্জিত হয় একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে।


৬। কোনো পাপী ব্যক্তি অশ্রদ্ধা বা অবহেলায় রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলেও, কোটি কোটি কুলে বিষ্ণুলোক তাঁর আশ্রয় হয়।


৭।  গোহত্যা, ব্রহ্মহত্যাসহ সকল পাপ নষ্ট হয় একবার রাধাষ্টমী ব্রত পালনেই।


৮। যারা জেনে বা না জেনে রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন না, তারা শত কোটি কল্পেও নরকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় না।


৯। রাধাষ্টমী ব্রত না পালনকারী ব্যক্তি কোটিকল্প নরকবাসী হন এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলেও বিধবা জীবন কাটাতে হয়।


১০। রাধাষ্টমীর ব্রত মাহাত্ম্য শ্রবণ করলে, ঐ ব্যক্তি নিত্যকাল বৈকুণ্ঠলোকেই বাস করার সৌভাগ্য লাভ করে।


অতএব, সকল ভক্তগণ রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে শ্রীরাধার কৃপা প্রার্থনা করবেন— “শ্রীরাধিকা করুণাস্বরূপ, আমাকে তোমার পাদপদ্মের দাসত্ব দান করো।” শ্রীরাধার দাসত্ব গ্রহণ মানেই শ্রীকৃষ্ণের অসীম কৃপার অধিকারী হওয়া।আপনারাও রাধাষ্টমী ব্রত পালন করুন এবং ভগবানের অপরিমেয় অনুগ্রহ লাভ করুন।

ভক্তরা এই হ্লাদিনী শক্তির অশেষ কৃপায় কৃষ্ণপ্রেমের অপরিমেয় সমুদ্রে অবগাহন করেন। এই হ্লাদিনী শক্তির জীবন্ত প্রতিমূর্তি হলেন শ্রীমতী রাধারাণী।

radha-ashtami-puja
radha-ashtami-puja


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধারাণীর জন্মলীলা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়—

অপ্রাকৃত বৃন্দাবনধামের মাধ্বীতলায়, রত্নসিংহাসনে একাকী বসে আছেন কৃষ্ণচন্দ্র। লীলাবিলাস করার আকাঙ্ক্ষায়, তাঁর বাম অঙ্গ থেকে হ্লাদিনী শক্তি প্রতীক হয়ে প্রগট হন শ্রীমতী রাধারাণী। রাধারাণী হলেন আদি শক্তির দেবী অবতার। তাঁর গাত্রবর্ণ তপ্ত সোনার মতো দীপ্তিময়, আর দেহসৌষ্ঠব রত্নমণির অপার সংযোজনে সৌন্দর্যে আলোকিত। তিনি নানা রূপে লীলাবিলাস করে শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি সাধন করেন।শ্রীকৃষ্ণের আনন্দ আরও বৃদ্ধি করতে, রাধারাণী তাঁর নিজস্ব অঙ্গ থেকে অসংখ্য গোপিকাদের প্রকাশ করেন, যারা কৃষ্ণের লীলার অংশীদার হয়ে আনন্দের উৎসব রচনা করেন।

প্রশ্ন: রাধাষ্টমী কি রাধার জন্মদিন?

উত্তর: হ্যাঁ, রাধাষ্টমী হলো শ্রীমতী রাধার জন্মদিনের উৎসব। রাধাষ্টমী তিথি অর্থাৎ কার্তিক মাসের অষ্টমী দিনে (শুক্ল পক্ষ) শ্রীমতী রাধার জন্ম হওয়ার স্মরণে এই উৎসব পালিত হয়। ভক্তরা এই দিনে রাধারানীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রেম নিবেদন করেন, বিশেষ করে ব্রজাঞ্চলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় রাধাষ্টমীর উদযাপন হয়। শ্রীমতী রাধা হলেন শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ, লীলাসঙ্গিনী এবং কৃষ্ণপ্রেমের প্রধান অবতার, তাই রাধাষ্টমী তিথির গুরুত্ব অনেক বেশি। ভক্তরা এই দিনে ব্রত পালন, ভজন-সঙ্গীত ও ধ্যানমগ্ন হয়ে রাধার প্রতি সুমধুর প্রেম প্রকাশ করেন।

মন্তব্য: রাধা অষ্টমী তিথিতে প্রেমের ভরা মৌসুম আসে, কারণ এই দিনটা শ্রীমতী রাধার জন্মদিন। ভক্তদের মনে ওই প্রেমের আলো জ্বলে, সব কিছু যেন প্রেমে জড়িয়ে যায়, আর গোলোকের মাঝে সুন্দর মিলনের আনন্দ হয়।

Comments

Popular posts from this blog

সত্যিকারের বন্ধু চেনার উপায়

ভগবান শব্দের প্রতিশব্দ ও সংজ্ঞা - দর্শন ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

ধর্ম এবং মানবতা