অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) প্রতিরোধ করুন
অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) প্রতিরোধ করুন: সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক আচরণ বজায় রাখুন। (পশুসম্পদ রক্ষা, অনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেল্থ সার্ভিস প্রদান এবং সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন (SBCC)-এর জন্য পুরন্দপূর্ণ তথ্য) অ্যানথ্রাক্স (ভড়কা) রোগটি পশু ও মানুষের জন্য বিপজ্জনক হলেও, এটি ছড়ায় মূলত অজ্ঞতা এবং ভুলের কারণে। সঠিক তথ্য জানা ও তা মেনে চললে রোগটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আতক্ষিত না হয়ে সচেতন হোন। এই রোগ প্রতিরোধে আপনার সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
![]() |
অ্যানথ্রাক্স (তড়কা |
১. অ্যানথ্রাক্স কী? (শ্রান্তি দূরীকরণ) রোগের কারণ: এটি 'ব্যাসিলাস অ্যাস্থাসিস (Bacillus anthracis)' নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার স্পোর (জীবাণু) দ্বারা হয়। এটি কোনো অভিশাপ বা অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত জীবাণুঘটিত রোগ। সংক্রমণের মাধ্যম: এই স্পোরগুলো সাধারণত আক্রান্ত এলাকার মাটির গভীর স্তরে দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।। বন্যা, মাটি কাটা বা খননের সময় স্পোর উন্মুক্ত হয় এবং ঘাস বা পশুখাদ্যকে দূষিত করে। মানুষে সংক্রমণ: মানুষ আক্রান্ত হয় কেবলমাত্র অসুস্থ বা মৃত পশুর রক্ত, মাংস বা চামতার সংস্পর্শে এলে। মানুষ সাধারণত সংক্রমিত প্রাণীজ পণ্য (যেমন অসুস্থ বা মৃত পশুর রক্ত, মাংস, চামড়া, লোম) বা যুষিত মাটি/খুলিকণার সংস্পর্শে এলে এই রোগে আক্রান্ত হয়। ২. জ্যানদ্রান্স (ভড়কা) সন্দেহজনক পশুর গুরত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ: . পশু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় এবং সাধারণত ফোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই মারা যায়। নাক, মুখ, মলদ্বারসহ প্রাকৃতিক ছিদ্রপথ দিয়ে কালো, আলকাতরার মতো রক্তপাত হতে পারে, যা জমাট বাঁধে না। মৃত্যুর পর পশুর শরীর দ্রুত ফুলে ওঠে। ৩. জ্যানগ্রান্স (কা) সন্দেহ হলে আপনার করণীয় ও অত্যাবশ্যকীয় জরুরি পদক্ষেপসমূহ (অবশ্যই করবেন) অ্যানথ্রাক্স (ভড়কা) প্রতিরোধে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। করণীয় পদক্ষেপ কেন এটি করবেন? (আচরণ পরিবর্তনের মূল কারণ) অবিলম্বে যোগাযোগ/অবিলম্বে রিপোর্ট পশু অসুস্থ হলে বা হঠাৎ মারা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিস/ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল-এ খবর দিন/ যোগাযোগ করুন।। দ্রুত পরীক্ষা ও রোগ নিশ্চিতকরণ অত্যাবশ্যক। পৃথকীকরণ অসুস্থ পশুকে অবিলম্বে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করুন এবং নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। মৃতদেহ কাটবেন না কখনোই মৃত পশুর দেহ কাটবেন না বা মাংস ভুলবেন না। এই ভুলটিই সবচেয়ে বেশি জীবাণু বা রোগ।
সুরক্ষিত সৎকার
মৃত পশুকে ৬ ফুট (প্রায় ২ মিটার) গভীর গর্তে পুঁতে দিন। পুঁতে দেওয়ার আগে দেহের উপর চুন (লাইম)
বা ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন। কখনোই মৃতদেহ পানিতে ভাসাবেন না, যেখানে-সেখানে ফেলবেন না বা খোলা রাখবেন না।
![]() |
অ্যানথ্রাক্স |
* সৎকার করার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (গ্লাভস ও মাক্ষ) ব্যবহার করুন।
টিকাদান কর্মসূচি
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী সকল সুস্থ গবাদি পশুকে নিয়মিতভাবে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা
দিন। টিকা আপনার পশুকে রক্ষা করবে।
ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভা
অসুস্থ বা মৃত পশুর সংস্পর্শে আসার পর সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন।
আপনার শরীরে কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত থাকলে যেন অসুস্থ বা মৃত পশুর রক্ত বা তরল না লাগে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
৪. যে ভুলগুলি কঠোরভাবে বর্জনীয় (কুসংস্কার ও আভক্ষ রোধ) X
এই কাজগুলো অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর মূল কারণ এবং সামাজিক উদ্বেগ বাড়ায়। এগুলো থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।
বর্জনীয় কাজ
ঝুঁকি/ফলাফল এবং সামাজিক বার্তা
অসুস্থ বা মৃত পশুকে গোপনে জবাই করা
আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য গোপনে জবাই করা সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ। এটি করলে রোগ
সৃষ্টিকারী জীবাণু বাতাসে ও মাটিতে ছড়িয়ে যায় এবং যারা জবাই করেন, তাদের মধ্যে জীবাণু
সংক্রমণ হয়।
অসুস্থ পশুর মাংস বিক্রি/খাওয়া
অ্যানপ্তাক্স-আক্রান্ত পশুকে কখনোই জবাই, বিক্রি বা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবেন না। এর মাংস ও রক্ত
অত্যন্ত বিপদজনক। এটি শুধু আপনার নয়, আপনার ক্রেতা, পরিবার ও সমাজকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
ফেলবে।
মৃতদেহ পানিতে ফেলা/খুলে রাখা
মৃত পশুকে ফেলে রাখবেন না, পানিতে ভাসিয়ে দেবেন না বা খোলা জায়গায় রাখবেন না। এতে জীবাণু পানি ও
পশুখাদ্যকে দূষিত করে এবং রোগ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়।
বিনা সুরক্ষায় স্পর্শ ফরা
আপনার শরীরে কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত থাকলে যেন অসুস্থ বা মৃত পশুর রক্ত বা তরল না লাগে, সে
অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহার
বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আপনার চামড়ার ছোট কোনো কাটা-ছেঁড়ার মাধ্যমেও জীবাণু/স্পোর দেহে। প্রবেশ করতে পারে। সৎকার করার সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (গ্লাভস ও মাক্ষ) ব্যবহার করুন।
ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না। এতে সমস্যা বাড়বে।
আপনার সচেতনভাই এই রোগ প্রতিরোধ ও নিযন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।
সচেতনতায়:
(জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও প্রাণিসম্পদ রক্ষায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ)
Comments
Post a Comment