Posts

হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান কোথায়? | মাতৃশক্তি ও নারীর মর্যাদা

Image
হিন্দুধর্মে মাতা কেবল পরিবারের মমতাময়ী রক্ষক নন, তিনি দেবীর এক জীবন্ত প্রতীক। বেদ ও পুরাণে মাতৃরূপে দেবীকে শক্তি, জ্ঞান ও সমৃদ্ধির উৎস হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে—যেমন দুর্গা শক্তির প্রতীক, সরস্বতী জ্ঞানের আর লক্ষ্মী সমৃদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী। ‘মাতৃ দেবো ভব’ এই বেদবাক্য মায়ের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার গভীরতা প্রকাশ করে। সমাজেও মায়ের ভূমিকা শুধুমাত্র সন্তান পালন নয়, বরং নৈতিকতা, ধর্ম ও সংস্কারের প্রথম শিক্ষক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। সনাতন ধর্মে মায়ের স্থান হিন্দুধর্মে মাতা হচ্ছেন সেই শক্তি, যিনি ঘরে দেবী, সমাজে আদর্শ এবং আত্মিক জগতের প্রথম উপাস্য। প্রথমে ইন্ট্রোতে বলবো হিন্দুধর্মে মাতৃরূপী দেবীদের গুরুত্ব (দুর্গা, কালী ইত্যাদি)। তারপর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট - বেদ/পুরাণে মাতৃশক্তির উল্লেখ। সনাতন ধর্মে মায়ের গুরুত্ব ও স্থান সম্পর্কে তিনটি সহজ পর্যায় রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হয় তারপর আলোচনা করা হবে ধর্মীয় ভিত্তিতে মা ও বাবার গুরুত্ব ও স্থান কোথায়? ১. দেবী হিসেবে মাতা: সনাতন ধর্মে মাকে শুধু একজন জন্মদাত্রী হিসেবে নয়, বরং দেবীরূপে পূজিত করা হয়। মায়ের মধ্যে পরম করুণা, নিঃস্বার...

সম্পদ কাকে বলে? শ্রেণীবিভাগ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা

Image
সম্পদ হচ্ছে একটি দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। যে দেশে যত সম্পদ মজুদ আছে অথবা সংরক্ষিত ভান্ডার হিসাবে রক্ষিত  আছে সে দেশি  অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক  ভাবে তত বেশি শক্তিশালী। সম্পদ শুধুমাত্র  প্রকৃতিপ্রাপ্ত  থাকে না  মনুষ্য সৃষ্ট সম্পদ ও   তৈরী করতে দেখা যায়। তাই বলা যায়, সম্পদ হচ্ছে সম্ভাব্য সম্পদ এবং বাস্তবে যে সম্পদ বিকাশ লাভ করছে এ দুয়ের পার্থক্য। আলোচনায় সম্পদের  তিনটি সমার্থক শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় ।যথা- মজুদ ,  সম্পদ এবং সংরক্ষিত  ভান্ডার। যা সম্পদের প্রকৃতি (Nature) হিসাবেও পরিচিত।  সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের ছবি  সম্পদ বলতে কি বুঝায় - সম্পদ অটল বা সুবির নয়। সময় অনুসারে আবার স্থায়ীও নয়।  আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষারাটে সম্পদ প্রকৃতপক্ষে গতিমান। কোন কিছুই  সম্পদ হিসাবে গণ্য হয় না যতক্ষন পর্যন্ত না তার কার্য-কারিতা সৃষ্টি হয়। সাধারণ অর্থে, বস্তুর কার্যকারিতা বলতে অভাব মোচনের ক্ষমতাকে বুঝায় যা মানুষের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। সম্পাদ বিশারদ zimmerman (১৯৫১) এর মতে" স্বতন্ত্র  বা একক  বৈশিষ্ট্য...

ভৌগলিক জ্ঞানের বিকাশে টলেমীর অবদান মূল্যায়ন

Image
ভৌগোলিক জ্ঞান বিজ্ঞানে যে কয়জন রোমান ভূগোলবিদ অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ক্লাউডিয়াস টলেমী- (claudius Tolemy) অন্যতম। রোমান ভূগোলবিদ হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল সুদূর প্রসারিত। রোমান যুগে বিভিন্ন কারনে যখন জ্ঞান-চর্চা স্তিমিত হয়ে যাচ্ছিল তখন টলেল্পী সাহসিকতার সাথে তার জ্ঞান চর্চা অব্যাহত রাখেন। ভৌগোলিক জ্ঞান বিকাশে তাই তার অবদান অসামান্য। টলেমীর পৃথিবীর মানচিত্র জন্ম-পরিচয়ঃ ক্লাউডিয়াস টলেমী গ্রিসীয় রোমান যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ, জ্যোতির্বিদ, গাণিতিক, দার্শনিক ও মানচিত্র বিদ ছিলেন। তার জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ সম্বন্ধে  সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও কিছু সংখ্যক প্রাচীন পাণ্ডুলিপি থেকে জান যায় যে, তিনি পেলুশিয়ানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে কোন কোন পন্ডিতের মতে  তিনি ৯০ থকে  ১৬৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে  আনেক্যান্দ্রিয়ায় জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেন।  টলে মির ভৌগোলিক অবদানঃ - ভৌগোলিক জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে টলেমীর অবদান সমধিক প্রসিদ্ধ। তিনি ভুগোলের যে সকল আথায় অবদান রাখেন তা নিম্নে আলোচিত হলঃ- ১. টলেমীর রচনাবলীঃ - তিনি আলমাজেষ্ট (Almagest) জিওগ্রাফিকা  (Geographica) ভ...

সভ্যতা বলতে কি বুঝ? মিশরীয় সভ্যতা বা নীল সভ্যতার বিবরণ।

Image
সভ্যতা হল মানুষের সামগ্রিক জীবনাচরণের সমষ্টি। তাদের জীবনাচরণ সমষ্টির বর্হিপ্রকাশ হল সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতির চরম উৎকর্ষতার চূড়ান্ত রূপ হল সভ্যতা। সত্যতা একটি জটিল প্রক্রিয়া। মানুষের নানাবিধ উন্নত আচরণের বা কর্মকান্ডের দ্বারা সভ্যতা বিকশিত হয়ে থাকে। নীলনদ সভ্যতার ছবি  সভ্যতা শব্দটির উৎপত্তিঃ ইংরেজী 'civilization' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল সভ্যতা। civilization শব্দটি civics বা civitus শব্দদয় থেকে এসেছে। civics শব্দের অর্থ হল নাগরিক। অর্থ্যা নাগরিকের দ্বারা যখন উন্নত জীবনব্যবস্থা স্থাপিত হয় তখন তা সভ্যতা হিসাবে অভিহিত হয়। ফরাসী দার্শনিক ভলটেয়ার সর্বপ্রসম civilization' শব্দটি ব্যবহার করেন। সভ্যতার প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক সজরাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। ১. সমাজবিজ্ঞানী Moryan টার Ancient Society" গ্রন্থি বলেছেন," সজল হচ্ছে বিবর্তন নামক সিঁড়ির শেষ ধাপ।" ২.সমাজবিজ্ঞানী "ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, " মানুষ তার জীবনধর্ষণ ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রন কম্পো যে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা বা সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সার...

কোন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বলা হয়েছে?

Image
এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের কথা জানতে হবে। তাই একটু সময় দিয়ে এই পোস্টটি পড়ুন। আশা করি, এই পোস্টের পর হিন্দু ধর্মের লোকেরা মাথা নিচু করে থাকার প্রয়োজন বোধ করবেন না। আপনি আর্য সমাজী এবং অন্য ধর্মের মানুষের কাছে গর্বিতভাবে মাথা উঁচু রাখতে পারবেন। ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের ছবি প্রত্যেক সনাতনী যখন এই বিষয়ে কথা বলবে, তারা বিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারবেন যে শ্রীকৃষ্ণই ঈশ্বর। আজকাল অনেকেই শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানতে চান না, এমনকি কিছু হিন্দুও মানতে অস্বীকার করেন। তারা গীতায় শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বর হওয়ার কথা বোঝাতে চান না। তারা বলেন গীতা শ্রীকৃষ্ণের কথা নয় কিংবা শ্রীকৃষ্ণকে কোথাও ঈশ্বর বলা হয়নি ইত্যাদি নানা অযৌক্তিক কথা বলে। এখানে গীতা এবং পুরাণ ছাড়া অন্য কিছু ধর্মগ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বলা হয়েছে সেগুলো আলোচনা করছি। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি একদিকে নিরাকার, অন্যদিকে সাকার। শ্রীবিষ্ণু এবং শ্রীকৃষ্ণ আলাদা নয়, শ্রীবিষ্ণুই শ্রীকৃষ্ণের রূপে এই পৃথিবীতে এসেছেন। শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বলা হয়েছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে, যেমন ঋগ্বেদ, মহাভারত (পঞ্চম বেদ), ব্রহ্মসংহিতা। ফের শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতেও শ্রীকৃষ্ট...

রাধারানীর আবির্ভাব তিথি (Radha Ashtami) - তারিখ, ইতিহাস ও পূজা বিধি

Image
রাধারানীর আবির্ভাব তিথি সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ থাকলেও আমরা চেষ্টা করব আপনাদের মাঝে সেই সকল মতবাদ গুলোর মধ্যে যেগুলো গ্রহণযোগ্য তা তুলে ধরার জন্য।  শ্রীমতি রাধারানীর আবির্ভাব তিথি , যাকে আমরা সকলেই রাধা অষ্টমী নামে জানি, বৈষ্ণব ধর্মীয় পরম্পরায় এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন হল রাধা অষ্টমীর দিন। এটি মূলত ভাদ্র মাসে শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। ভাদ্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথিতে, নন্দগাঁওয়ের পাশে বর্ষাণা নামক গ্রামে, রাজা বৃ্ষভানু ও রানী কীর্তিদার কন্যা রূপে শ্রীরাধারানি আবির্ভূত হন পৃথিবীতে। শাস্ত্র অনুসারে, তিনি শ্রীকৃষ্ণের আনন্দশক্তির (হ্লাদিনী শক্তি) সরূপা, ভক্তি ও প্রেমের সর্বোচ্চ প্রকাশ বলে ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। তাঁর আবির্ভাব দিনটিতে ভক্তরা উপবাস পালন করেন, শ্রীরাধার পাদপদ্মে পূজা ও অর্চনা করেন এবং হরিনাম সংকীর্তনে অংশগ্রহণ করে এই দিবস উদযাপন করেন যাতে পৃথিবী ও মানুষের মঙ্গল হয়। আপনারা হয়তো সকলেই জানেন, রাধারানীর কৃপা ছাড়া শ্রীকৃষ্ণভক্তি লাভ করা দুষ্কর অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের দেখা পাওয়া যায় না, আর এমনটাই বিশ্বাস ও লেখা রয়েছে বিভি...

মন্দির ও তীর্থক্ষেত্রের মধ্যে পার্থক্য কি? সম্পূর্ণ গাইড

Image
হিন্দু ধর্মের মন্দির আর তীর্থক্ষেত্র দুটোই খুবই পবিত্র স্থান। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কিছু বড় ধরনের পার্থক্য আছে, যেগুলো আমাদের সবাইকে জানাটা জরুরি। মন্দিরগুলো সাধারণত দেব দেবীর পূজার জন্য তৈরি করা হয়। এখানে ভক্তরা নিয়মিতভাবে এসে প্রার্থনা করেন, দান করেন এবং উৎসব পালন করেন। মন্দিরে গেলে সাধারণত আমরা পুজা-আচার দেখি এবং ভক্তদের উল্লাসও অনুভব করতে পারি। মন্দিরে অনেক সময় ভক্তদের ঠিকানা জানিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে তারা কিছু নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা সহায়তা, শিক্ষা প্রতিস্থাপন বা সেবা পেতে পারেন। অন্যদিকে, তীর্থক্ষেত্র হলো সেইসব জায়গা, যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। এগুলো সাধারনত নদী, পুকুর বা পাহাড়ের পাশে হয়, আর সেখান থেকেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এখানে আসলে মানুষ সাধনার জন্য, আত্মা শুদ্ধ করার জন্য বা পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে যান। সাধারণত, তীর্থে গিয়ে পবিত্র জলে স্নান করা এক ধরনের ধর্মীয় রীতি, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মন্দির ও তীর্থক্ষেত্রের ছবি মন্দির কি? মন্দির হল হিন্দুদের উপাসনালয়, যেখানে নির্দিষ্ট দেবদেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং নিয়মিত পূজা-অর্চনা করা হয়। দেব...