শিবপূজা ও শিবরাত্রি ব্রতকথা
শিবপূজা ও শিবরাত্রি ব্রতকথা – পূজা পদ্ধতি, উপবাসের নিয়ম ও সম্পূর্ণ কাহিনি
শিবপূজা হিন্দুধর্মে অন্যতম প্রাচীন ও শক্তিশালী উপাসনা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, শিবের কৃপা পেলে পাপমোচন, শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও সংসার সুখ লাভ হয়। মহাশিবরাত্রি হল শিবপূজার সর্বোচ্চ তিথি, যখন শিব–পার্বতীর মিলন এবং লিঙ্গোৎপত্তির পবিত্র ঘটনা স্মরণ করা হয়।
![]() |
| শিবপূজা ও শিবরাত্রি |
সমুদ্র হইতে যেমন বুদবুদরাশি উত্থিত হয়ে পুনর্ব্বার সেই সমুদ্রে বিলীন হয়। সেইরূপ পরমব্রহ্ম রূপ সমুদ্রে সমস্ত ব্রাহ্মাণ্ড লয় পাইতেছে। সেই পরমব্রহ্মকেই শিব বলে। সুতরাং শিপূজা বলতে গেলে ব্রহ্মের উপাসনাই বুঝতে হবে।
শিবলিঙ্গ : নির্মাণ প্রণালী (ক) “ওঁ হরায় নমঃ”, বলে একতোলা বা দুইতোলা মাটি নিয়ে "ও মহেশ্বরায় নমঃ" বলে অঙ্গুষ্ঠ পরিমিত প্রস্তুত করবে। মাটি তিন ভাগ করে উপরে লিঙ্গ, মধ্যে গৌরীপীঠ। এবং শেষাংশ দ্বারা বেদী (আসন) প্রস্তুত করবে। পরে একটি ক্ষুদ্র গোলাকৃতি মাটি শিবলিঙ্গের মস্তকে দিবে। উহার নাম ব্রজ। পূজাকালে ভস্ম বা মাটি দ্বারা ললাটে ত্রিপুণ্ড্রক (আর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি) এবং কন্ঠে রুদ্রাক্ষমালা ধারণ করবে। পাদ প্রক্ষালন করে উত্তরমুখে কুশাসনে বা কম্বলাসনে বসিবে। দুইটি শিবলিঙ্গ। একত্র রাখিয়া পূজা করবে না। একটির পূজা হলে চর পূজা হলে পরে আর একটি নির্মাণ করে পূজা করবে।
আচমনঃ ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু উচ্চারণপূর্বক আচমন করে ও তদবিষ্ণোঃ ইত্যাদি মন্ত্রে বিষ্ণুস্মরণ করবে। ও দবিষ্ণোঃ পরমং বদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম্" এই মন্ত্রে বিষ্ণুর সূচন করবে। স্বতিবাচন নয়টি আতপ চাল দক্ষিণ হস্তে নিয়ে "ও সোমং রাজানং বরুণমগ্নিমম্বারভামহে, আদিত্যং বিষ্ণুং সূৰ্য্যাং ব্রহ্মণঞ্চ বৃহস্পতিম। ও স্বস্তি, ও স্বস্তি, ও স্বস্তি"।
যজুর্ব্বেদীয় স্বস্তিবাচন: ও স্বস্তি নঃ ইন্দ্রো বৃদ্ধাশ্রবাঃ স্বস্তিনঃ পুষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নস্তার্থ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তিনো বৃহস্পতির্দধাতু। ও গণানাং তৃ গণপতিওং, হরামহে, "প্রিয়াণাং তা প্রয়পতিং হবামহে, বিধীনং জ্বা নিধিপতিং হবামহে, বসো মম। ও স্বস্তি, ও স্বস্তি, ও স্বস্তি। যজুর্বেদে রশষসহ এর আগে "ং" উ”চারণ স্থলে "গুং" এই বর্ণটি উচ্চরিত হয়। "গণানাং ত্বা" ইত্যাদি বসোমম পর্য্যন্ত ১টি মন্ত্র তাই বৈদিক মন্ত্রের আদিতে ১ বার মাত্র ও দিতে হবে, মধ্যে প্রয়োজন নাই।
ঋগ্বেদীয় স্বস্তিবাচন: ও স্বস্তিনো মিমীতামুশ্বিনা ভগঃ স্বস্তিদেব্যদিতিরনবক্ষণঃ। স্বস্তিপুষা অসুরো দধাতু নঃ স্বস্তি দ্ব্যাবাপৃথিবী সুচেতনা।। ও স্বস্তয়ে বায়ুমুপৱবামহৈ সোমং স্বস্তি ভুবনস্য যম্পতিঃ। বৃহস্পতিং সর্ব্বগণং স্বস্তয়ে স্বস্তয়ে আদিত্যাসো ভবস্তু নঃ- ও বিশ্বে দেবা নো অদ্যা স্বস্তয়ে বৈশ্বানরো বায়ুরগ্নিঃ বায়ুরগ্নিঃ স্বস্তয়ে। দেবা অরন্তভবঃ স্বস্তয়ে স্বস্তিনো রূদঃ পাতুংহসঃ।। ও স্বস্তিমিত্রাবরুণা স্বস্তিপথ্যে রেবতী। স্বস্তিন স্বস্তিন ইন্দ্রশ্চাগ্নিশ্চ স্বস্তিনো, আদিতে কৃধি।। ও স্বস্তি পন্থামনুচরেম সূৰ্য্যাচন্দ্রমসাবিব। পুনৰ্দ্দতা স্নতা জানতা সংগমেমহি। ও স্বস্ত্যয়নং তাক্ষ্যমরিষ্ট ন ইন্দ্রণ্ডাগ্নিগ্ধ স্বস্তিনো, আদিতে কৃধি।।ও স্বাস্ত স্বস্ত্যয়নং তাক্ষ্যমরিষ্ট নেমিং মহদ্ভুতং বায়সং দেবতানাং। অসুরম্নমিন্দ্রসখং সমৎসু বৃহদ্যশো, নাবমিরারুহেম।। ও অংহো মুচম্যঙ্গিরসং গায়ঞ্চ স্বস্ত্যাত্রেয়ং মনসা চ তাক্ষ্যং প্রয়তপাণিঃ শরণং প্রপদ্যে স্বস্তি সংবাধেযুভয়ং নো অস্ত্র।। ও স্বস্তি, ও স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি।
এই মন্ত্র পাঠ করে সেই চালগুলি তিনটি তিনটি করে নিক্ষেপ করবে। এবং করজোড়ে "ওঁ সূর্য্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা। পবনো দিকপতির্ভু মিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রহ্মং শাসনমান্থায় করবামিহ সন্নিধিম। ও তৎসৎ অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।" (ক)
সামান্যার্ঘ্য: ভূমিতে একটি ত্রিকোণ মণ্ডলের উপর গোল ও চতুষ্কোণ মন্ডল করে তার উপর "এতে গন্ধপুষ্পে ও আধারশভয়ে নমঃ। ওঁ কুৰ্ম্মায় নমঃ। ও অনন্তায় নমঃ। ও পৃথিব্যৈ নমঃ" এই মন্ত্রে চারিবার গন্ধপুষ্প দিবে। পরে অস্ত্রায় ফট বলে কোশা ধুয়ে নমঃ মন্ত্রে জল দিয়া অগ্রে অর্ঘ্য সাজাবে। অর্থাৎ ১টা বেলপাতা গন্ধপুষ্প, অক্ষত, যব, কুশাগ্র, তিল, সর্ষপ ও দুর্বা এই আটটি দ্বারা অর্থ সাজাতে হয়। গন্ধ পুষ্প, আতপ চাল, বিল্বপত্র এবং ত্রিপত্রদুর্ব্বা স্থাপন করবে। জলশুদ্ধি: অঙ্কুশ মুদ্রাযোগে "ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতি। নর্ম্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু"। এই মন্ত্রে তীর্থ আবাহন করে এতে গন্ধ পুষ্পে "ও জলায় নমঃ" এই মন্ত্রে জলে গন্ধপুষ্প প্রদান করবে। পরে 'বং' এই মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা দ্বারা এই দল আ'ছাদন করতঃ তদুপরি দশবারে বা আটবার 'ও' জপ করে এই জন তিনবার ভুতলে ছিটায়ে আপন মস্তকে ও সমুদায় পূজার। উপকরণে ছিটাবে।
আসনশুদ্ধিঃ দক্ষিণ ভাগে আসনের নিম্নে ভূমিতে ত্রিকোণ মন্ডল করে 'এতে গন্ধ পুষ্পে' ও 'হীং আধার শক্তি কমলাসনায় নমঃ' এই মন্ত্রে পুষ্প দ্বারা পূজা করবে। পরে আসন ধরিয়া আসনমন্ত্রসা। "মেরুপৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কুৰ্ম্মো- দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ। ওঁ ওঁ পৃথি ত্বঢ়য়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বং ত্বং চ ধারয় মাং নিত্যাং পবিত্রং কুরু চাসনম। এই মন্ত্র পাঠ করবে। পরে বামদিকে ও গুরুভ্যো নমঃ, ও পরম গুরুভ্যো নমঃ, ও পরমেষ্ঠিগুরুভ্যো নমঃ। দক্ষিণে ও গণেশায় নমঃ।
উর্দ্ধে ও ব্রহ্মণে নমঃ। অধঃ ও অনন্তায় নমঃ। মধ্যে ও শিবায় নমঃ। এই বলে স্পর্শ করে প্রণাম করবে। ভূতাপসারণ: ও অপসর্পস্তু তে ভূতা যে ভূতা ভূমিসংস্থিতাঃ। যে ভুতা বিঘ্নকর্ত্তারস্তে নশ্যন্ত শিবাজ্ঞয়া। এই মন্ত্র পাঠ করে আতপ তন্ডুল নিয়ে ওঁ দিব্যান বিয়ান উৎসারয়ামি ও অন্তরীক্ষগান বিঘ্নান। উৎসারয়ামি, ও ভৌমান বিঘ্নান উৎসারয়ামি বলে তন্ডুল বিকিরণ করে তিনবার পদাঘাত করবে ও মস্তকের উপর তিনবার ফটমন্ত্রে করতালি দিয়া ভূতাপসারণ ও দিগবন্ধন করবে।
বজ্রমোচনঃ ও পণ্ডপতেয়ে নমঃ' বলে শিবলিঙ্গের উপর তিনবার জল প্রদান করে এবং বজ্র নামাইয়া পিনাকের উপর রাখবে।
প্রাণ প্রতিষ্ঠা: শিবের মস্তকে আতপ তণ্ডুল দিয়া লেলিহান মুদ্রায় 'ওঁ শুলপাণে! ইহা সুপ্রতিষ্ঠিতো ভব' এই বলে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর প্রাণায়াম্, অঙ্গন্যাস পূর্বক ধ্যন করবে।
ধ্যান: ও ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুজন্দাবতংসম্। রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরা- ভীতিহস্তং প্রসন্নম। পদ্মাসীনং সমস্তাং স্তুতমমরগণৈব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানম। বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম। এইরূপ ধ্যান করে নিজ মস্তকে বিল্বপত্র দিয়া মানস পূজা করবে ও পুনবক্ষার পুষ্প বিল্বপত্র নিয়ে ধ্যান করিয়া শিবের মস্তকে ঐ পুষ্প দিবে এবং পঞ্চমুদ্রা দ্বারা আবাহন করবে। (ক) পঞ্চমুদ্রা (১) আবাহন মুদ্রা, (২) সংস্থাপন মুদ্রা, (৩) সংনিরোধন মুদ্রা, (৪) সন্নিধ্যাপন মুদ্রা (৫) সম্মুখীকরণ মুদ্রা।
আবাহন: (১) ও পিনাক ধক। ইহাগচ্ছ, ইহাগচ্ছ (২) ইহ তিষ্ঠ, ইহ তিষ্ঠ, (৩) ইহ সন্নিধেহি, ইহ সন্নিধেহি, ইহ সন্নিধেহি, (৪) ইহ সন্নিরুধ্যস্ব, (৫) অত্রাধিষ্ঠানং কুরু। করয়োড়ে- স্থাং স্থীং হিরো ভব। মম পূজাং গৃহাণ।
শিবম্লান মন্ত্রঃ 'ইদং স্নানীয়োদকং ও পশুপতয়ে নমঃ' এই বলে জল দ্বারা শিবকে তিনবার স্নান করাবে। পরে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করবে। এতৎ পাদ্যং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। ইদমাচমনীয়াং ও নমঃ। শিবায় নমঃ। ইদং স্নানীয় জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এষ গন্ধঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎ পুষ্পং ও নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎৎসচন্দন বিল্বপত্রং ও নমঃ শিবায় নমঃ। এষ ধুপঃ ও নমঃ শিবায় নমঃ। এখ দীপঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎ সোপকরণ নৈবেদ্যাং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। পরে গৌরী পীঠে (পিনাকের মূলে) ও গৌয়ৈা নমঃ। এই মন্ত্রে পূজা করবে।
অষ্টমূর্তি পূজাঃ পূর্ব দিকে এতে গন্ধপুষ্পে ও সবক্ষায় ক্ষিতিমর্ত্তয়ে নমঃ। এইরূপ ইশান কোণে-ও ভরায় জলমুর্য্যয়ে নমঃ। উত্তরে ও রুদ্রায় অগ্নিমূর্তয়ে নমঃ। বায়ু কোণে- ও উগ্রায় বায়ু মূর্ত্তয়ে নমঃ। পশ্চিমে- ওঁ ভীমায় আকাশমত্তায়ে নমঃ। নৈর্ঝতে-পণ্ডপতয়ে যজমান-মর্ত্তয়ে নমঃ দক্ষিণে- ও মহাদেবায় সোমমর্ত্তয়ে নমঃ, অগ্নিকোণে- ও ঈশানায় সর্য্যমত্তয়ে নমঃ। সবক্ষত্র "এতে গন্ধপুষ্পে" বলবে। পরে এই মন্ত্রে ১০ বার খাঁ ১০৮ বার জপ করতঃ 'ও গুহ্যাতি-গৃহ্যগোপ্তা তুং গ্রহাণাম্মৎকৃতং জপম। সিদ্ধির্ভবত মে দেব। তৃৎম্প্রসাদাাহেশ্বর। এই মন্ত্রে জলগণ্ডষ শিবের দক্ষিণ হস্তে মনে মনে দিবে। পরে দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী যোগ করে তদ্দারা 'বয়' "বম', 'বম' শব্দে দকিইষণ গণ্ডে করিয়া পরে স্তব পাঠ করবে।
শিব প্রণাম: ও নমস্তুভং বিরূপাক্ষ! নমস্তে দিব্যচক্ষুষে।
নমঃ পিনাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ।। নমস্ত্রিশুলহস্তায় দণ্ডপাশাসিপাণয়ে। নমস্ত্রৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ।। নমঃ শিবায় শান্তায় কীরণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ামি চত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।।
পুংসামপূর্ণ কামানং কামনারামমীশ্বরম্।। ক্ষমা প্রার্থনা: আবাহনং ন জানামি নৈব জানামি পূজনম, বিসর্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বর।
বিসর্জন: ইশানকোণে ত্রিকোণ মণ্ডল করে সংহার মুদ্রা দ্বারা একটি নির্মাল্য লইয়া ঘ্রাণান্তে "পূজিত দেবতা হৃৎকমলের মধ্যে প্রবিষ্ট হলেন" এইরূপ চিন্তা করতে করতে নির্মাল্যটি ত্রিকোণ মণ্ডলের উপর রেখে "এতে গন্ধ পুষ্পে ও চণ্ডেশ্বরায় নমঃ" বলিয়া পূজা করবে পরে "মহাদেব! ক্ষমস্ব" বলে শিবমুর্ত্তিকে কাৎ করে রাখবে এবং শিবের মস্তকে একটু জল দিবে। পরে দক্ষিণা, অচ্ছিদ্রাধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান করবে পরে চরণামৃত ও নির্মাল গ্রহণ করবে। (শিব নির্মাল্যাদি প্রথমে বিষ্ণুকে নিবেদন। করে গ্রহণ করতে হয়।)
শিবরাত্রি ব্রত
প্রথমে স্বস্তিবাচন 'ওঁ সূৰ্য্যঃ সোমঃ' ইত্যাদি পাঠ করে সঙ্কল্প করবে
। সঙ্কল্প: বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য ফাল্গুনে মাসি কৃষ্ণেপক্ষে চতুৰ্দ্দশ্যাং তিথৌ অমুক গোত্রঃ শ্রীঅমুক দেবশর্মা (শুক্লপক্ষে শ্রী অমুক দাসঃ) সুখসৌভাগ্যারোগ্যপ্রাপ্তিপুবক্ষক শিলোক- প্রাপ্তিকামঃ শিবরাত্রি ব্রতমহং করিষ্যে।
পরে সঙ্কল্প স্বশাখোক্ত সঙ্কল্পসুক্ত পাঠ (সঙ্কল্পসুক্ত প্রত্যেক বেদের পৃথক পৃথক আছে) করে করযোড়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করবে।
"ওঁ শিবরাত্রিব্রতং হোতৎ করিষ্যে দূহং মহাফলং। নিবিক্ষঘ্নমস্তু মে দেব! তৃৎপ্রসাদাজ্জগৎপতে।"
অতঃপর পূবেক্ষাক্ত বিধি অনুসারে শিবপূজা করবে। কেবল শিবরাত্রির জন্য স্নানের ও অর্ঘ্যের মন্ত্র পৃথক আছে-
এপটির প্রথম প্রহরে-স্নানের মন্ত্র প্র
"ওঁ হৌং ঈশানায়
নমঃ।" এই মন্ত্র দুগ্ধের দ্বারা স্নান করিয়ে পরে জলের দ্বারা স্নান করাবে।
অর্ঘ্যের মন্ত্রঃ ও শিবরাত্রি ব্রতং দেব! পূজা জপরায়ণঃ
করোমি বিধিবদ্বত্তং গৃহাণাং মহেশ্বর- এই মন্ত্রে অর্ঘ্যদান করবে। দ্বিতীয় প্রহরে-স্নানের মন্ত্র
"ও হৌং অঘোরায় নমঃ" এই মন্ত্রে দধিদ্বারা স্নান করাবে।
অর্থের মন্ত্রঃ "ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সবক্ষাপাপহরায় চ।
শিবরাত্রৌ দদামাং প্রসীদ উময়া সহ।। ও তৃতীয় প্রহরে-স্নানের মন্ত্র
নমঃ” এই মন্ত্রে ঘৃত দ্বারা স্নান করাবে।
"ও হৌং বামদেবায়
অর্ঘ্যের মন্ত্রঃ "ও দুঃখদারিদ্রশোকেন দগ্ধোহহং পার্বতীশ্বর।
শিবরাত্রৌ দদাম্য্য মুমাকান্ত প্রসীদ মে।।
চতুর্থ প্রহরে-স্নানের মন্ত্র
"ও হৌং সদ্যেজাতায় নমঃ" এই মন্ত্রে মধু দ্বারা স্নান করাবে।
অর্ঘ্যের মন্ত্রঃ ও ময়া কৃত্যান্যন্বেকানি পাপানি হর শঙ্কর। শিবরাত্রেী দদাম্য্যমুমাকান্ত। গৃহাণ মে।।
এইরূপে পূজা শেষ করে শিবের স্তব পাঠ করবে এবং ব্রতকথা শ্রবণ করবে।
শিবাস্টক স্তব
শিবরাত্রি ব্রতকথা
বনে বনে ভ্রূমি করে প্রাণি বধ কত।
নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।।
একদিন মাংসভার করিয়া বহন।
বৃক্ষমূলে শয়ন করিলে হয়ে ক্লান্ত।।
ক্রমে ক্রমে সূর্য্যদেব অস্তাচলে যান।
হেকালে নিদ্রিত ব্যধে হল জ্ঞান।।
চুতর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন।
ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যধ অতিশয়।
অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।
শীতের কাঁপিতেছিল শরীর তাহার।
সর্ব্বাঙ্গে পড়িতেছিল নিশার তুষার।।
দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষমূলে।
স্থাপন করিয়াছি কেব কোন কালে।।
সেই দিন শিব রাত্রি দৈবের ঘটনা।
উপবাসি ব্যধ তার অন্নের ভাবনা।।
তাহার শরীর হ'তে হিমবিন্দু যত।
বৃক্ষমূলে শিবলিঙ্গ পড়ে অবিরত।।
সেই বৃক্ষ বিল্বপত্র নামে সুবিখ্যত।
যাহার পত্রেতে শম্ভু হন সাদা প্রীত।।
ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্বদল।
শিবের মস্তকে পড়িতেছিল অবিরল।।
ব্যধের সে আচরণে দেব আশুতোষ।
মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।।
এই ভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল।
ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।
বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল।
রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।।
অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।।
মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে।
অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্টমনে।।
সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।।
আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত।
অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।।
গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে।
শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।।
শিবরাত্রি ব্রতকথা শুনে যেইজন।
অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।।
