শিবপূজা ও শিবরাত্রি ব্রতকথা

শিবপূজা ও শিবরাত্রি ব্রতকথা – পূজা পদ্ধতি, উপবাসের নিয়ম ও সম্পূর্ণ কাহিনি

শিবপূজা হিন্দুধর্মে অন্যতম প্রাচীন ও শক্তিশালী উপাসনা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, শিবের কৃপা পেলে পাপমোচন, শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও সংসার সুখ লাভ হয়। মহাশিবরাত্রি হল শিবপূজার সর্বোচ্চ তিথি, যখন শিব–পার্বতীর মিলন এবং লিঙ্গোৎপত্তির পবিত্র ঘটনা স্মরণ করা হয়।

শিবপূজা ও শিবরাত্রি hd
শিবপূজা ও শিবরাত্রি


সমুদ্র হইতে যেমন বুদবুদরাশি উত্থিত হয়ে পুনর্ব্বার সেই সমুদ্রে বিলীন হয়। সেইরূপ পরমব্রহ্ম রূপ সমুদ্রে সমস্ত ব্রাহ্মাণ্ড লয় পাইতেছে। সেই পরমব্রহ্মকেই শিব বলে। সুতরাং শিপূজা বলতে গেলে ব্রহ্মের উপাসনাই বুঝতে হবে।

শিবলিঙ্গ : নির্মাণ প্রণালী (ক) “ওঁ হরায় নমঃ”, বলে একতোলা বা দুইতোলা মাটি নিয়ে "ও মহেশ্বরায় নমঃ" বলে অঙ্গুষ্ঠ পরিমিত প্রস্তুত করবে। মাটি তিন ভাগ করে উপরে লিঙ্গ, মধ্যে গৌরীপীঠ। এবং শেষাংশ দ্বারা বেদী (আসন) প্রস্তুত করবে। পরে একটি ক্ষুদ্র গোলাকৃতি মাটি শিবলিঙ্গের মস্তকে দিবে। উহার নাম ব্রজ। পূজাকালে ভস্ম বা মাটি দ্বারা ললাটে ত্রিপুণ্ড্রক (আর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি) এবং কন্ঠে রুদ্রাক্ষমালা ধারণ করবে। পাদ প্রক্ষালন করে উত্তরমুখে কুশাসনে বা কম্বলাসনে বসিবে। দুইটি শিবলিঙ্গ। একত্র রাখিয়া পূজা করবে না। একটির পূজা হলে চর পূজা হলে পরে আর একটি নির্মাণ করে পূজা করবে।

আচমনঃ ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ বিষ্ণু উচ্চারণপূর্বক আচমন করে ও তদবিষ্ণোঃ ইত্যাদি মন্ত্রে বিষ্ণুস্মরণ করবে। ও দবিষ্ণোঃ পরমং বদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম্" এই মন্ত্রে বিষ্ণুর সূচন করবে। স্বতিবাচন নয়টি আতপ চাল দক্ষিণ হস্তে নিয়ে "ও সোমং রাজানং বরুণমগ্নিমম্বারভামহে, আদিত্যং বিষ্ণুং সূৰ্য্যাং ব্রহ্মণঞ্চ বৃহস্পতিম। ও স্বস্তি, ও স্বস্তি, ও স্বস্তি"।

যজুর্ব্বেদীয় স্বস্তিবাচন: ও স্বস্তি নঃ ইন্দ্রো বৃদ্ধাশ্রবাঃ স্বস্তিনঃ পুষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নস্তার্থ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তিনো বৃহস্পতির্দধাতু। ও গণানাং তৃ গণপতিওং, হরামহে, "প্রিয়াণাং তা প্রয়পতিং হবামহে, বিধীনং জ্বা নিধিপতিং হবামহে, বসো মম। ও স্বস্তি, ও স্বস্তি, ও স্বস্তি। যজুর্বেদে রশষসহ এর আগে "ং" উ”চারণ স্থলে "গুং" এই বর্ণটি উচ্চরিত হয়। "গণানাং ত্বা" ইত্যাদি বসোমম পর্য্যন্ত ১টি মন্ত্র তাই বৈদিক মন্ত্রের আদিতে ১ বার মাত্র ও দিতে হবে, মধ্যে প্রয়োজন নাই।

ঋগ্বেদীয় স্বস্তিবাচন: ও স্বস্তিনো মিমীতামুশ্বিনা ভগঃ স্বস্তিদেব্যদিতিরনবক্ষণঃ। স্বস্তিপুষা অসুরো দধাতু নঃ স্বস্তি দ্ব্যাবাপৃথিবী সুচেতনা।। ও স্বস্তয়ে বায়ুমুপৱবামহৈ সোমং স্বস্তি ভুবনস্য যম্পতিঃ। বৃহস্পতিং সর্ব্বগণং স্বস্তয়ে স্বস্তয়ে আদিত্যাসো ভবস্তু নঃ- ও বিশ্বে দেবা নো অদ্যা স্বস্তয়ে বৈশ্বানরো বায়ুরগ্নিঃ বায়ুরগ্নিঃ স্বস্তয়ে। দেবা অরন্তভবঃ স্বস্তয়ে স্বস্তিনো রূদঃ পাতুংহসঃ।। ও স্বস্তিমিত্রাবরুণা স্বস্তিপথ্যে রেবতী। স্বস্তিন স্বস্তিন ইন্দ্রশ্চাগ্নিশ্চ স্বস্তিনো, আদিতে কৃধি।। ও স্বস্তি পন্থামনুচরেম সূৰ্য্যাচন্দ্রমসাবিব। পুনৰ্দ্দতা স্নতা জানতা সংগমেমহি। ও স্বস্ত্যয়নং তাক্ষ্যমরিষ্ট ন ইন্দ্রণ্ডাগ্নিগ্ধ স্বস্তিনো, আদিতে কৃধি।।ও স্বাস্ত স্বস্ত্যয়নং তাক্ষ্যমরিষ্ট নেমিং মহদ্ভুতং বায়সং দেবতানাং। অসুরম্নমিন্দ্রসখং সমৎসু বৃহদ্যশো, নাবমিরারুহেম।। ও অংহো মুচম্যঙ্গিরসং গায়ঞ্চ স্বস্ত্যাত্রেয়ং মনসা চ তাক্ষ্যং প্রয়তপাণিঃ শরণং প্রপদ্যে স্বস্তি সংবাধেযুভয়ং নো অস্ত্র।। ও স্বস্তি, ও স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি।

এই মন্ত্র পাঠ করে সেই চালগুলি তিনটি তিনটি করে নিক্ষেপ করবে। এবং করজোড়ে "ওঁ সূর্য্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা। পবনো দিকপতির্ভু মিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রহ্মং শাসনমান্থায় করবামিহ সন্নিধিম। ও তৎসৎ অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।" (ক)

সামান্যার্ঘ্য: ভূমিতে একটি ত্রিকোণ মণ্ডলের উপর গোল ও চতুষ্কোণ মন্ডল করে তার উপর "এতে গন্ধপুষ্পে ও আধারশভয়ে নমঃ। ওঁ কুৰ্ম্মায় নমঃ। ও অনন্তায় নমঃ। ও পৃথিব্যৈ নমঃ" এই মন্ত্রে চারিবার গন্ধপুষ্প দিবে। পরে অস্ত্রায় ফট বলে কোশা ধুয়ে নমঃ মন্ত্রে জল দিয়া অগ্রে অর্ঘ্য সাজাবে। অর্থাৎ ১টা বেলপাতা গন্ধপুষ্প, অক্ষত, যব, কুশাগ্র, তিল, সর্ষপ ও দুর্বা এই আটটি দ্বারা অর্থ সাজাতে হয়। গন্ধ পুষ্প, আতপ চাল, বিল্বপত্র এবং ত্রিপত্রদুর্ব্বা স্থাপন করবে। জলশুদ্ধি: অঙ্কুশ মুদ্রাযোগে "ওঁ গঙ্গেযমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতিনর্ম্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু"। এই মন্ত্রে তীর্থ আবাহন করে এতে গন্ধ পুষ্পে "ও জলায় নমঃ" এই মন্ত্রে জলে গন্ধপুষ্প প্রদান করবেপরে 'বং' এই মন্ত্রে ধেনুমুদ্রা দ্বারা এই দল আ'ছাদন করতঃ তদুপরি দশবারে বা আটবার 'ও' জপ করে এই জন তিনবার ভুতলে ছিটায়ে আপন মস্তকেসমুদায় পূজারউপকরণে ছিটাবে

আসনশুদ্ধিঃ দক্ষিণ ভাগে আসনের নিম্নে ভূমিতে ত্রিকোণ মন্ডল করে 'এতে গন্ধ পুষ্পে' ও 'হীং আধার শক্তি কমলাসনায় নমঃ' এই মন্ত্রে পুষ্প দ্বারা পূজা করবেপরে আসন ধরিয়া আসনমন্ত্রসা। "মেরুপৃষ্ঠ ঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কুৰ্ম্মো- দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃওঁ ওঁ পৃথি ত্বঢ়য়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতাত্বং ত্বংধারয় মাং নিত্যাং পবিত্রং কুরু চাসনমএই মন্ত্র পাঠ করবেপরে বামদিকেগুরুভ্যো নমঃ, ও পরম গুরুভ্যো নমঃ, ও পরমেষ্ঠিগুরুভ্যো নমঃদক্ষিণেগণেশায় নমঃ

উর্দ্ধেব্রহ্মণে নমঃঅধঃঅনন্তায় নমঃমধ্যেশিবায় নমঃএই বলে স্পর্শ করে প্রণাম করবেভূতাপসারণ: ও অপসর্পস্তু তে ভূতা যে ভূতা ভূমিসংস্থিতাঃযে ভুতা বিঘ্নকর্ত্তারস্তে নশ্যন্ত শিবাজ্ঞয়াএই মন্ত্র পাঠ করে আতপ তন্ডুল নিয়ে ওঁ দিব্যান বিয়ান উৎসারয়ামিঅন্তরীক্ষগান বিঘ্নানউৎসারয়ামি, ও ভৌমান বিঘ্নান উৎসারয়ামি বলে তন্ডুল বিকিরণ করে তিনবার পদাঘাত করবেমস্তকের উপর তিনবার ফটমন্ত্রে করতালি দিয়া ভূতাপসারণদিগবন্ধন করবে

বজ্রমোচনঃপণ্ডপতেয়ে নমঃ' বলে শিবলিঙ্গের উপর তিনবার জল প্রদান করে এবং বজ্র নামাইয়া পিনাকের উপর রাখবে

প্রাণ প্রতিষ্ঠা: শিবের মস্তকে আতপ তণ্ডুল দিয়া লেলিহান মুদ্রায় 'ওঁ শুলপাণে! ইহা সুপ্রতিষ্ঠিতো ভব' এই বলে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর প্রাণায়াম্, অঙ্গন্যাস পূর্বক ধ্যন করবে

ধ্যান: ও ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুজন্দাবতংসম্রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরা- ভীতিহস্তং প্রসন্নমপদ্মাসীনং সমস্তাং স্তুতমমরগণৈব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানমবিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রমএইরূপ ধ্যান করে নিজ মস্তকে বিল্বপত্র দিয়া মানস পূজা করবেপুনবক্ষার পুষ্প বিল্বপত্র নিয়ে ধ্যান করিয়া শিবের মস্তকেপুষ্প দিবে এবং পঞ্চমুদ্রা দ্বারা আবাহন করবে। (ক) পঞ্চমুদ্রা (১) আবাহন মুদ্রা, (২) সংস্থাপন মুদ্রা, (৩) সংনিরোধন মুদ্রা, (৪) সন্নিধ্যাপন মুদ্রা (৫) সম্মুখীকরণ মুদ্রা

আবাহন: (১) ও পিনাক ধকইহাগচ্ছ, ইহাগচ্ছ (২) ইহ তিষ্ঠ, ইহ তিষ্ঠ, (৩) ইহ সন্নিধেহি, ইহ সন্নিধেহি, ইহ সন্নিধেহি, (৪) ইহ সন্নিরুধ্যস্ব, (৫) অত্রাধিষ্ঠানং কুরুকরয়োড়ে- স্থাং স্থীং হিরো ভবমম পূজাং গৃহাণ

শিবম্লান মন্ত্রঃ 'ইদং স্নানীয়োদকংপশুপতয়ে নমঃ' এই বলে জল দ্বারা শিবকে তিনবার স্নান করাবেপরে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করবেএতৎ পাদ্যং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃইদমাচমনীয়াংনমঃশিবায় নমঃইদং স্নানীয় জলং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃএষ গন্ধঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃএতৎ পুষ্পংনমঃ শিবায় নমঃএতৎৎসচন্দন বিল্বপত্রংনমঃ শিবায় নমঃএষ ধুপঃনমঃ শিবায় নমঃএখ দীপঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃএতৎ সোপকরণ নৈবেদ্যাং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃপরে গৌরী পীঠে (পিনাকের মূলে) ও গৌয়ৈা নমঃএই মন্ত্রে পূজা করবে

অষ্টমূর্তি পূজাঃ পূর্ব দিকে এতে গন্ধপুষ্পেসবক্ষায় ক্ষিতিমর্ত্তয়ে নমঃএইরূপ ইশান কোণে-ও ভরায় জলমুর্য্যয়ে নমঃউত্তরেরুদ্রায় অগ্নিমূর্তয়ে নমঃবায়ু কোণে- ও উগ্রায় বায়ু মূর্ত্তয়ে নমঃপশ্চিমে- ওঁ ভীমায় আকাশমত্তায়ে নমঃনৈর্ঝতে-পণ্ডপতয়ে যজমান-মর্ত্তয়ে নমঃ দক্ষিণে- ও মহাদেবায় সোমমর্ত্তয়ে নমঃ, অগ্নিকোণে- ও ঈশানায় সর্য্যমত্তয়ে নমঃসবক্ষত্র "এতে গন্ধপুষ্পে" বলবেপরে এই মন্ত্রে ১০ বার খাঁ ১০৮ বার জপ করতঃ 'ও গুহ্যাতি-গৃহ্যগোপ্তা তুং গ্রহাণাম্মৎকৃতং জপমসিদ্ধির্ভবত মে দেবতৃৎম্প্রসাদাাহেশ্বরএই মন্ত্রে জলগণ্ডষ শিবের দক্ষিণ হস্তে মনে মনে দিবেপরে দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠতর্জনী যোগ করে তদ্দারা 'বয়' "বম', 'বম' শব্দে দকিইষণ গণ্ডে করিয়া পরে স্তব পাঠ করবে

শিব প্রণাম: ও নমস্তুভং বিরূপাক্ষ! নমস্তে দিব্যচক্ষুষে।

নমঃ পিনাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ।। নমস্ত্রিশুলহস্তায় দণ্ডপাশাসিপাণয়ে। নমস্ত্রৈলোক্য নাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ।। নমঃ শিবায় শান্তায় কীরণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ামি চত্মানং ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর।।

পুংসামপূর্ণ কামানং কামনারামমীশ্বরম্।। ক্ষমা প্রার্থনা: আবাহনং ন জানামি নৈব জানামি পূজনম, বিসর্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বর।

বিসর্জন: ইশানকোণে ত্রিকোণ মণ্ডল করে সংহার মুদ্রা দ্বারা একটি নির্মাল্য লইয়া ঘ্রাণান্তে "পূজিত দেবতা হৃৎকমলের মধ্যে প্রবিষ্ট হলেন" এইরূপ চিন্তা করতে করতে নির্মাল্যটি ত্রিকোণ মণ্ডলের উপর রেখে "এতে গন্ধ পুষ্পে ও চণ্ডেশ্বরায় নমঃ" বলিয়া পূজা করবে পরে "মহাদেব! ক্ষমস্ব" বলে শিবমুর্ত্তিকে কাৎ করে রাখবে এবং শিবের মস্তকে একটু জল দিবে। পরে দক্ষিণা, অচ্ছিদ্রাধারণ ও বৈগুণ্য সমাধান করবে পরে চরণামৃত ও নির্মাল গ্রহণ করবে। (শিব নির্মাল্যাদি প্রথমে বিষ্ণুকে নিবেদন। করে গ্রহণ করতে হয়।)

শিবরাত্রি ব্রত

প্রথমে স্বস্তিবাচন 'ওঁ সূৰ্য্যঃ সোমঃ' ইত্যাদি পাঠ করে সঙ্কল্প করবে

। সঙ্কল্প: বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য ফাল্গুনে মাসি কৃষ্ণেপক্ষে চতুৰ্দ্দশ্যাং তিথৌ অমুক গোত্রঃ শ্রীঅমুক দেবশর্মা (শুক্লপক্ষে শ্রী অমুক দাসঃ) সুখসৌভাগ্যারোগ্যপ্রাপ্তিপুবক্ষক শিলোক- প্রাপ্তিকামঃ শিবরাত্রি ব্রতমহং করিষ্যে।

পরে সঙ্কল্প স্বশাখোক্ত সঙ্কল্পসুক্ত পাঠ (সঙ্কল্পসুক্ত প্রত্যেক বেদের পৃথক পৃথক আছে) করে করযোড়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করবে।

"ওঁ শিবরাত্রিব্রতং হোতৎ করিষ্যে দূহং মহাফলং। নিবিক্ষঘ্নমস্তু মে দেব! তৃৎপ্রসাদাজ্জগৎপতে।"

অতঃপর পূবেক্ষাক্ত বিধি অনুসারে শিবপূজা করবে। কেবল শিবরাত্রির জন্য স্নানের ও অর্ঘ্যের মন্ত্র পৃথক আছে-

এপটির প্রথম প্রহরে-স্নানের মন্ত্র প্র

"ওঁ হৌং ঈশানায়

নমঃ।" এই মন্ত্র দুগ্ধের দ্বারা স্নান করিয়ে পরে জলের দ্বারা স্নান করাবে।

অর্ঘ্যের মন্ত্রঃ ও শিবরাত্রি ব্রতং দেব! পূজা জপরায়ণঃ

করোমি বিধিবদ্বত্তং গৃহাণাং মহেশ্বর- এই মন্ত্রে অর্ঘ্যদান করবে। দ্বিতীয় প্রহরে-স্নানের মন্ত্র

"ও হৌং অঘোরায় নমঃ" এই মন্ত্রে দধিদ্বারা স্নান করাবে।

অর্থের মন্ত্রঃ "ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সবক্ষাপাপহরায় চ।

শিবরাত্রৌ দদামাং প্রসীদ উময়া সহ।। ও তৃতীয় প্রহরে-স্নানের মন্ত্র

নমঃ” এই মন্ত্রে ঘৃত দ্বারা স্নান করাবে।

"ও হৌং বামদেবায়

অর্ঘ্যের মন্ত্রঃ "ও দুঃখদারিদ্রশোকেন দগ্ধোহহং পার্বতীশ্বর।

শিবরাত্রৌ দদাম্য্য মুমাকান্ত প্রসীদ মে।।

চতুর্থ প্রহরে-স্নানের মন্ত্র

"ও হৌং সদ্যেজাতায় নমঃ" এই মন্ত্রে মধু দ্বারা স্নান করাবে।

অর্ঘ্যের মন্ত্রঃ ও ময়া কৃত্যান্যন্বেকানি পাপানি হর শঙ্কর। শিবরাত্রেী দদাম্য্যমুমাকান্ত। গৃহাণ মে।।

এইরূপে পূজা শেষ করে শিবের স্তব পাঠ করবে এবং ব্রতকথা শ্রবণ করবে


শিবাস্টক স্তব

প্রভু-মীশ-মনীশ-মহেশ-গুণং, গুণহীন-মহীশ-গণাভরণম্
রণনির্জিত-দুর্জয়-দৈত্যপুরং,
প্রণমামি শিবং শিষ-কল্পতরুম্।। ১
গিরিরাজসুতান্বিতবামতনুং,
তনুনিন্দিতরাজিত-কোটি বিধুম
বিধি-বিষ্ণু-শিরোচিত পাদযুগং,
প্রণমামি শিবং শিব-কল্পতরুম্।। ২
শশলাঞ্ছিত-রঞ্জিত-সম্মুকুটং
কটি-লম্বিত সুন্দর কত্তিপটং
সুর শৈবলিনী-কত পুতজটং
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম।। ৩
নয়নত্রয় ভূষিত চারুমুখং মুখপদ্ম-বিনিন্দিত-কৌটি-বিধুম
বিমুখণ্ড বিমণ্ডিত-ভালতটং 
প্রণমামি শিবং শিব-কল্পতরুম
বৃষরাজনিকেতন মাদিগুরুং, গরলাশনমার্তিবিনাশকরম্।
প্রমথাধিপ সেবক রঞ্জনকং,
প্রণমামি শিবং শিব-কল্পতরুম্।।৫
মকরধ্বজ মত্তমাতঙ্গ-হরং, করিচৰ্ম্মবিলাস-বিশেষকরম্
বরদাভয়শূল বিষাণ ধরং,
প্রণামামি শিবং শিব-কল্পতরুম্।। ৬
জগদুদ্ভব-পালন-নাশকরং,
করুণেশ গুণত্রয়-রূপধরম
প্রিয় মানব সাধুজনৈকগতিং,
প্রণমামি শিবং শিব-কল্পতরুম।। ৭
স্কুরদস্তুত কীলসমাল্য ধরং,
হৃদয়স্থ তমোগুণ বিনাশ করং
ভজতোহখিল-দুঃখ সমূহ-হরং,
প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরুম্।। ৮

শিবরাত্রি ব্রতকথা

কৈলাস ভূধরে দেব বৃষভাবন
গৌরী সহ বসিয়া করেন আলাপন।।
রবিবর কিরণ পড়ি শিখরে তাহার
মলিন করিয়া দেয় বরণ সোনার।।
আনন্দে পার্ব্বতী সতী জিজ্ঞাসেন শিবে
কহ দেব! কোন ধৰ্ম্ম শ্রেষ্ঠ হয় ভাবে।।
কিরা ব্রত অনুষ্ঠানে কোন পস্যায়
ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ চতুবর্গ হয়
এরূপ কি পুণ্য কৰ্ম্ম আছে সুবিদিত
যাহা দ্বারা লাভ হয় সকল বাঞ্ছিত।।
মর্তবাসী তোমাকে তুষিতে ধরাতলে
অনায়াসে পারে বল কি কৰ্ম্ম করিলে।।
শুনিয়া পার্ব্বতী বাক্য কহেন শঙ্কর
শুন দেবি! কোন কৰ্ম্ম মম প্রীতিকর।।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুৰ্দ্দশী
শিবরাত্রি নামে খ্যাত অন্ধকারে নিশি।।
ব্রত উপবাস করি সেদিন যে জন
ভক্তি ভাবে করিবে মার আরাধন।।
সতাতুষ্ট হই আমি তাহাদের প্রতি
ব্রতের বিধান দেবি! শুনহ সম্প্রতি।।
পূর্ব্ব দিনে ব্রহ্মচর্য্য করিয়া পালন
রত্রিতে তৃণের শর্য্যা নিম্মার্ণ করবে
তাহাতে শয়ন করি আমাকে স্মরিবে।।
প্রাতঃকালে সত্বর করিয়া গাত্রোত্থান
নদী কিংবা সরোবর জলে করি স্নান।।
বিল্ববৃক্ষেমুলে গিয়া প্রণাম করবে
আবশ্যক মত পত্র সংগ্রহ করবে।।
একমাত্র বিল্বদলে তুষ্ট আমি হই
মণি, মুক্তা, স্বর্ণ, রত্না, প্রবাল না চাই।।
রাত্রিতে হইয়া শূচি যে পূজে আমারে
সদা অভিমত ফল দিব আমি তারে।।
পার্থিব শঙ্কর মুর্তি করিয়া নির্মাণ
প্রথমে প্রহরে দুগ্ধে করাইবে স্নান।।
দ্বিতীয় প্রহের দধি তৃতীয়তে ঘৃত
চতুর্থ প্রহরে মধু স্নানোতে বিহিত।।
পূজা শেষে যথাবিধি তাগীত করি
তুষিবে আমার নর গুণহ শঙ্করি।।
পরদিন প্রাতঃকালে হয়ে শুচিব্রত
করাইবে ব্রাহ্মণ ভোজন নিয়মিত।।
এই শিবরাত্রি ব্রত যে জন করিবে
অনায়াসে সেই জন আমাকে তুষিবে।।
কটোর তপস্যা আর দান, যজ্ঞ যত
কোন কৰ্ম্ম নহে তুল্য শিবরাত্রি মত।।
এই ব্রত আচরণেলভিয়া বঞ্ছিত
নিরামিষ হবিষ্যান্ন করিবে ভোজন।।
ব্রতের মাহাত্ম এবে করহ শ্রবণ
পুণ্য-লাভ হয় শুনে সেই বিবরণ।।
পৃথিবীতে বরাণ সর্ব্বতীর্থ সার
যেখানে গমনে খণ্ডে কলুষ অপার।।
প্রাণি হিংসা পরায়ণ ব্যধ একজন
ভীষণ আকৃতি তার ক্রয় আচরণ।।
কৃষ্ণবর্ণে দেহ তার পিঙ্গল নয়ন
জাল ও বাগুরা হস্তে করযে ভ্রমণ।।

বনে বনে ভ্রূমি করে প্রাণি বধ কত।

নগরে নগরে মাংস বেচে অবিরত।।

একদিন মাংসভার করিয়া বহন।

গৃহ ফিরিতেছে ব্যাধ আনন্দিত মন।।
বহুদুর বনপথ ব্যধ পরিশান্ত।

বৃক্ষমূলে শয়ন করিলে হয়ে ক্লান্ত।।

ক্রমে ক্রমে সূর্য্যদেব অস্তাচলে যান।

হেকালে নিদ্রিত ব্যধে হল জ্ঞান।।

চুতর্দিক অন্ধকার দেখিয়া তখন।

চিন্তিত হইয়া ব্যধ করিলে মনন।।
আজ গৃহে যাইব না এই ব্রতিকাল
বৃক্ষেতে করিব বাস হউক সকাল।।

লতা দৃঢ় রজ্জু নির্মাণ করিয়া।
মাংসভার বৃক্ষে বাঁধি দিল তাহা দিয়া।।

হিংস্র জন্তু ভয়ে ব্যাধ বৃক্ষের উপর
উঠিয়া বসিল করি সাহসে নির্ভয়।।

ক্ষুধার্ত হইয়াছিল ব্যধ অতিশয়।

অন্ধকার রাত্রি তাহে হিংস্র জন্তু ভয়।

শীতের কাঁপিতেছিল শরীর তাহার।

সর্ব্বাঙ্গে পড়িতেছিল নিশার তুষার।।

দৈবক্রমে শিবলিঙ্গ সেই বৃক্ষমূলে।

স্থাপন করিয়াছি কেব কোন কালে।।

সেই দিন শিব রাত্রি দৈবের ঘটনা।

উপবাসি ব্যধ তার অন্নের ভাবনা।।

তাহার শরীর হ'তে হিমবিন্দু যত।

বৃক্ষমূলে শিবলিঙ্গ পড়ে অবিরত।।

সেই বৃক্ষ বিল্বপত্র নামে সুবিখ্যত।

যাহার পত্রেতে শম্ভু হন সাদা প্রীত।।

ব্যাধ অঙ্গ সঞ্চালনে পক্ক বিল্বদল।

শিবের মস্তকে পড়িতেছিল অবিরল।।

ব্যধের সে আচরণে দেব আশুতোষ।

মনে মনে অনুভব করেন সন্তোষ।।

এই ভাবে সমস্ত রজনী কেটে গেল।

ক্রমে ক্রমে উষার আলোক দেখা দিল।

বৃক্ষ হতে নামি ব্যাধ নিজ গৃহে গেল।

রাত্রির ঘটনা সব প্রকাশ করিল।।

অধীশ্বর হয় সর্ব্ব ধনের নিশ্চিত।।

মৃগমাংস বিতরিল পাড়ার ব্রাহ্মণে।

অবশেষে ভোজন করিল হৃষ্টমনে।।

এই ভাবে তাহার পারণ সিদ্ধ হল
শিবরাত্রি ব্রত ফল সম্পূর্ণ পাইল।।
আয়ুঃশেষ হল তার বহুকাল পরে
যমের কিঙ্কর এল লইবার তরে।।
যমদূত রজ্জু দ্বারা বাধিতে উদ্যত
হেনকালে পৌছে দূত শিবের নিযুক্ত।।
শিবদূত বলে যম দূত যাও দূরে
ব্যাধেকে লইয়া আমি যাব শিবপুরে।।
যমদূত বলে এই ব্যধি পাপী অতি
না যায় গণনা এর কুকর্ম সংহতি।।
যপুরে ইহাকে লইয়া যাব আমি
যমের আদেশে বৃথা কেন এলে তুমি।।
এইরূপে উভয়ের বিবাদ হইল
শিবদূত যমদূতে প্রহার করিল।।
পরাজিত হয়ে যম দূত যায় ঘারে
এই বার্তা প্রকাশিত যমের গোচরে।।
উপস্থিত হয়ে যম শিবদূতে কন
বিবাদের হেতু কিবা করহ বর্ণনা।।
শিবদূত বলে এই ব্যাধ পাপচারী
শিবরাত্রি প্রভাবে যাইবে শিবপুরী।।
আজীবন কেহ যদি পাপ কৰ্ম্ম করে
শিবরাত্রি ব্রত করি অবশেষে তরে।।
মহাদেব তুষ্ট এই ব্যাধের উপর
নাহি ভয় করি হাম শিবের কিঙ্কর।।
যমরাজ প্রণাম করিয়া শিবদূতে
গমন করেন নিজ বাসে হৃষ্টচিতে।।
ব্যধকে দেখিয়া মহাদেব তুষ্ট অতি
নির্দ্বিষ্ট হইলে তার কৈলাস বসতি।।
শুনিয়া পার্ব্বতী দেবী ব্রত বিবরণ
আত্মীয়বর্গের কাছে করেন বর্ণনা।।
তাঁহাদের মুখে ব্রত হইল বর্ণিত।

এইরূপে শিবরাত্রি হল প্রচারিত।।
যেই জন ভক্তিভরে শিবরাত্রি করে।

সংসার সাগর হতে অনায়াসে তরে।।

আরাধ্য দেবতা নাহি মহাদেব মত।

অশ্বমেধ সম নহে আর যজ্ঞ যত।।

গঙ্গার সমান তীর্থ নাহি পৃথিবীতে।

শিবরাত্রি সম ব্রত না আছে জগতে।।

শিবরাত্রি ব্রতকথা শুনে যেইজন।

অথবা যে জন করে শ্রদ্ধায় পঠন।।

মহাদেব সদা তুষ্ট হন তার প্রতি
শিবপদে করি আমি অসংখ্য প্রণতি।।


FAQ 

১. শিবরাত্রিতে কোন পূজা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?


শিবলিঙ্গে অভিষেক ও বিল্বপত্র নিবেদনই প্রধান।

২. শিবরাত্রিতে উপবাস কেন করা হয়?


উপবাস মন ও শরীরকে পবিত্র করে এবং শিবের কৃপা লাভ হয় বলে বিশ্বাস।

৩. শিবকে কেন বিল্বপাতা নিবেদন করা হয়?


ত্রিগুণ—সত্ত্ব, রজঃ, তম—এই তিনের প্রতীক হলো বিল্বপাতা।

উপসংহার: শিবপূজা ও শিবরাত্রি ব্রত ভক্তকে অন্তর থেকে শক্তি দেয় এবং জীবনের সব বাধা দূর করে। ভক্তিভরে পালন করলে মহাদেব প্রত্যাশা পূর্ণ করেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url