মা লক্ষ্মীর আটটি রূপ বিদ্যমান রূপগুলো হলো ঐশ্বর্য লক্ষ্মী, ধনলক্ষী, ভূমি লক্ষী,শ্রী লক্ষী, জ্ঞান লক্ষী,বিজ্ঞান লক্ষ্মী, অবসব লক্ষী।
![]() |
মা লক্ষ্মী |
মা লক্ষ্মী, ধন, সমৃদ্ধি এবং সুখের দেবী, আটটি রূপে পূজিত হন, যা ভক্তদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করেন।
আটটি রূপের পরিচিতি
মা লক্ষ্মীর আটটি রূপ হলো:
আইশ্বর্য লক্ষ্মী: এই রূপ ধন ও ঐশ্বর্যের গুণের প্রতীক। যারা সামর্থ্য ও সম্পদের সন্ধানে থাকেন, তারা এই রূপের আরাধনা করেন।
ধন লক্ষ্মী: এটি বিশেষভাবে অর্থ, সমৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক সফলতার দেবী। যেসব ব্যবসায়ী ও বৈদেশিক বাণিজ্য করে, তারা এই রূপের পূজা করেন।
ভূমি লক্ষ্মী: এই রূপ কৃষির সমৃদ্ধির এবং কৃষির দেবী হিসেবে পরিচিত। যারা কৃষিজীবী, তারা এই রূপের আরাধনা করে তাদের ফসল এবং ভুমির সাফল্যের জন্য।
শ্রী লক্ষ্মী: এটি সৌন্দর্য, সুষমা ও ভালোবাসার দেবী। প্রেম ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুখ চান তারাও এই রূপের আরাধনা করে।
জ্ঞান লক্ষ্মী: এই রূপ জ্ঞান, শিক্ষার এবং সৃষ্টিশীলতার দেবী। শিক্ষার্থীরা ও গবেষকরা এই রূপের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হন।
বিজ্ঞান লক্ষ্মী: এটি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রতীক। এই রূপের আরাধনা করা হয় বিজ্ঞানীদের এবং প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা।
ভাগ্য লক্ষ্মী: ভাগ্য এবং সু fortune এর দেবী হিসেবে পরিচিত। যারা খণ্ডকালীন সুবিধার সন্ধানে থাকেন, তারা এই রূপের পূজা করেন।
অবসব লক্ষ্মী: এটি সকল দুঃখ এবং দুর্ভোগ থেকে মুক্তির শক্তি দেয়। এই রূপের আরাধনা করে যারা রোগ, শোক এবং দুঃখ থেকে মুক্তি চান।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, মা লক্ষ্মী সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য ও সম্পদের দেবী। তিনি মূলত সমুদ্র মন্থনের সময় জন্মগ্রহণ করেন।
সমুদ্র মন্থনের কাহিনী অনুযায়ী — দেবতা ও অসুররা যখন অমৃত লাভের জন্য সমুদ্র মন্থন শুরু করেন, তখন সেই মন্থন থেকে অনেক মূল্যবান বস্তু ও দেবতা আবির্ভূত হন। তার মধ্যেই মা লক্ষ্মী বেরিয়ে আসেন এক অপূর্ব দীপ্তিময় রূপে, পদ্মফুলের ওপর বসে। তিনি দেবতা, মানব ও পৃথিবীতে সমৃদ্ধি, শান্তি ও সৌভাগ্য বিতরণ করতে পৃথিবীতে আসেন।
তিনি পৃথিবীতে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল: পৃথিবীতে ঐশ্বর্য, সুখ ও শ্রী প্রতিষ্ঠা করা, ধর্মের বিকাশে সহায়তা করা, এবং যারা সত্য, ন্যায় ও পরিশ্রমের পথ অনুসরণ করে, তাদের পুরস্কৃত করা।
মা লক্ষ্মীর আটটি রূপের মহিমা
মা লক্ষ্মী হিন্দু ধর্মের ধন, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। তাঁর আটটি বিশেষ রূপকে বলা হয় অষ্টলক্ষ্মী। এই অষ্টলক্ষ্মী আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকের জন্য কল্যাণ ও সফলতার প্রতীক। প্রথম রূপ আদিলক্ষ্মী, যিনি শান্তি ও সমৃদ্ধি দেন। এরপর ধনলক্ষ্মী, যিনি আর্থিক উন্নতি এনে দেন। ধান্যলক্ষ্মী কৃষি ও খাবারের দেবী, যিনি জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয়। গজলক্ষ্মী পশুসম্পদ ও রাজসিক সৌভাগ্যের প্রতীক, তিনিও ধন ও মর্যাদা বাড়ান।
সন্তানলক্ষ্মী সন্তানের জন্য আশীর্বাদ দেন, যাতে শিশুরা ভালো থাকে। বিজয়লক্ষ্মী সংগ্রামে জয়ী হতে সাহায্য করেন এবং সাহস যোগান। বিদ্যালক্ষ্মী শিক্ষার দেবী, যিনি জ্ঞান ও বুদ্ধি দেন। সবশেষে ভৈরবলক্ষ্মী বাধা ও বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এই আটটি রূপ আমাদের জীবনের আটটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের উন্নতি করতে সাহায্য করে। অষ্টলক্ষ্মীর কৃপায় মন ও দেহে পূর্ণতা আসে। প্রত্যেক রূপে মা লক্ষ্মী ভক্তদের জীবনে খুশি ও শান্তি আনেন। অষ্টলক্ষ্মীর আরাধনা করলে আসে সাফল্য, সমৃদ্ধি এবং শান্তি।
মা লক্ষ্মীর পূজা পদ্ধতি
মা লক্ষ্মীর পূজা সাধারণভাবে বৃহস্পতিবার, লক্ষ্মীপূর্ণিমা বা দীপাবলিতে বাড়িতে করা হয়। পূজার আগে ঘর ভালো করে পরিষ্কার করা হয়, কারণ মা লক্ষ্মী পরিচ্ছন্নতাকে খুব মনে করেন। পবিত্র স্থানে পুতুল বা রঙ্গোলি দিয়ে পূজার আসন সাজানো হয়। মা লক্ষ্মীর মূর্তি বা ছবি সুন্দর করে রাখা হয়। এরপর গঙ্গাজল, ফুল, ধূপ, মোমবাতি, চন্দন, সিঁদুর, চাল, দুধ, মধু, দই, ঘি, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি দিয়ে পূজা করা হয়। লক্ষ্মীনারায়ণকে একসঙ্গে পূজা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পূজার সময় লক্ষ্মী স্তোত্র, অষ্টলক্ষ্মী স্তোত্র বা বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করা হয়। আরতি ও প্রার্থনার মাধ্যমে ভক্তরা মায়ের কাছে শান্তি, ধন-সম্পদ ও ভালো ভাগ্য কামনা করেন। রাতে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়, যা অন্ধকার দূর করার সিম্বল। পূজার শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয় এবং পরিবারের সবাই এর মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেয়। মা লক্ষ্মীর পূজার মাধ্যমে সঠিকভাবে ও ভক্তিভরে করলে জীবনে শান্তি, সম্পদ ও সমৃদ্ধি আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।
মা লক্ষ্মী দেবীর পৃথিবীতে আবির্ভাব
মা লক্ষ্মীর আবির্ভাবের কাহিনী হিন্দু পুরাণে, বিশেষ করে বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ ও মহাভারতে পাওয়া যায়। এই কাহিনীর শুরু হয় যখন দেবতারা ও অসুরেরা মিলে অমৃত অর্জনের জন্য সমুদ্র মন্থনের পরিকল্পনা করে। একসময় দেবতারা দুর্বল হয়ে পড়েন এবং অসুরদের দ্বারা পরাজিত হন। তখন ভগবান বিষ্ণুর পরামর্শে তাঁরা অসুরদের সঙ্গে ঐক্য করে অমৃত পাওয়ার জন্য সমুদ্র মন্থনের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য মন্দার পাহাড়কে মথানি এবং বাসুকি নাগকে রশি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমুদ্র মন্থনের সময় প্রথমে বের হয় কালকূট বিষ, যেটি শিব পান করে সকলকে রক্ষা করেন। তারপর কামধেনু গরু, ঐরাবত হাতি, রম্ভা অপ্সরা, চন্দ্র, ধন্বন্তরী (অমৃত কলস সহ), কৌস্তুভ মণি ও শেষে দেবী লক্ষ্মী আবির্ভূত হন। মা লক্ষ্মী সমুদ্র মন্থনের সময় স্বর্ণালী আভা নিয়ে একটি সুন্দর পদ্মফুলের উপর বসে ওঠেন। তাঁর হাতে ছিল পদ্ম এবং রঙিন অলংকার। যখন তিনি উপস্থিত হন, তখন চারপাশে আলো ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। দেবতা ও ঋষিরা তাঁকে ফুল ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এরপর মা লক্ষ্মী চারদিকে চেয়ে দেখেন। তিনি দেখে নেন ভগবান বিষ্ণু, যিনি সবসময় ন্যায় ও ধর্মের রক্ষাকর্তা, সমুদ্র মন্থনের প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। মা লক্ষ্মী তাঁকে নির্বাচন করেন তাঁর স্বামী হিসেবে। এভাবে মা লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গী হন এবং শ্রী নামে পরিচিত হন। তিনি শুধু ধন-সম্পদের দেবী নন, বরং সৌন্দর্য, শুভ্রতা, সুখ ও কল্যাণের প্রতীক। আজও দীপাবলি ও কোজাগরী পূর্ণিমায় মানুষ লক্ষ্মী পূজা করে তাঁর আবির্ভাবের মাহাত্ম্য স্মরণ করে। মানুষ বিশ্বাস করে, মা লক্ষ্মীর দয়া পেলে জীবনআনে ধন-সম্পদ, সুখ এবং শান্তির আধিকার।
0 Comments