চৈতন্য মহাপ্রভুর অমূল্য উপদেশ ও জীবনবোধ

ভূমিকাঃ চৈতন্য মহাপ্রভুর অপর নাম ছিল নিমাই আর এই নিমাই ছিল অত্যন্ত দুরন্ত ও ছটফটে স্বভাব চরিত্রের। একটি নিম গাছের তলায় তার জন্ম হয়েছিল বলে তার নামকরণ করা হয়েছিল নিমাই চাঁদ। বাংলা ১৪০৭ বঙ্গাব্দে ফাল্গুন মাসে  অর্থাৎ ইংরেজি ১৪৮৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের পূর্ণিমা রাত্রির এক সন্ধ্যায় চন্দ্রগ্রহণ কালে জন্ম হয় তার। 

চৈতন্য মহাপ্রভুর উপদেশ pdf
চৈতন্য মহাপ্রভুর উপদেশ

ভারতীয় বৈদিক মতে, মানুষ তাদের পাপসমূহ থেকে মুক্তি পেতে চন্দ্রগ্রহণের রাতে যখন গঙ্গা বা গঙ্গা অববাহিকায় অর্থাৎ পবিত্র জলে ডুব দেয়। আর স্নান করার সময় হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জব করতে থাকেন ঠিক সেই মুহূর্তে  মানুষ খুব ভক্তিভরে "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে, রাম, হরে, রাম, রাম ,রাম, হরে, হরে" এই নাম জপ করছিল। চারিদিকে মো মো শব্দে  শুধু হরিনামের সুর শোনা গিয়েছিল, সেই সময় পশ্চিম বাংলার নবদ্বীপের মায়াপুরে জন্ম নিলেন কলিযুগের অবতার শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু। তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সবার ভাগ্য খুলে যেতে শুরু করল কারণ তিনি হরে কৃষ্ণ প্রচার করে কলি যুগ থেকে মানুষকে মুক্ত পেতে সহযোগিতা করেছিলেন।

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন ভক্তি আন্দোলনের একজন বড় নেতা, তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসার কথা বলেছেন তার সম্পূর্ণ জীবন জুড়ে। তাঁর কথাগুলো ছিল শ্রীকৃষ্ণকে ভক্তি করার আর ভালোবাসার ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে যাতে পৃথিবীর সকল মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন খারাপ কর্ম থেকে মুক্তি পেয়ে পরজগতে স্বর্গে যেতে পারে। তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ মূলক কথা নিচে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো:

১. হরিনামের মহিমা

আধ্যাত্মিকভাবে চৈতন্য মহাপ্রভু নাম জপ এবং নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের নাম প্রচারের উপর বেশ জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন:

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, হরিতে কৃষ্ণ নাম।

কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, মোহ কাটে প্রাণ।

হরে রাম হরে রাম, রামেতে প্রেমসুধা,

রাম রাম হরে হরে, মিলে চিরপ্রভা।

অর্থাৎ, এই মহামন্ত্র জপ করলে জীবের  মুক্তি মেলে ও ভগবদপ্রেম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়।

২. ত্রিনাদপি সুনীচেন মনোভাব

তিনি শিখিয়েছেন—
"তৃণাদপি সুনীচেন, তরোরিভ সহিষ্ণুনা।
অমানিনা মানদেন, কীর্তনীয়ঃ সদা হরি॥"
অর্থাৎ, নিজেকে তৃণের চেয়েও নিচু ভাবা, গাছের মতো সহিষ্ণু হওয়া, অন্যদের যথাযথ সম্মান দেওয়া, কিন্তু নিজের জন্য কোনো সম্মান প্রত্যাশা না করা—এভাবে সদা হরিনাম সংকীর্তন করা উচিত।

৩. শ্রীকৃষ্ণই পরম আরাধ্য

চৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণকে সর্বোচ্চ উপাস্য রূপে মেনে নিতে বলেছিলেন। তিনি বলেছেন—শ্রীকৃষ্ণই জীবের পরম পুরুষোত্তম ভগবান এবং তাঁর প্রেমই জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে হবে।

৪. ভক্তি যোগের গুরুত্ব

তিনি বলেন, শুধুমাত্র জ্ঞান বা কর্ম নয়, কৃষ্ণের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তিই পরম ধর্ম। তিনি অষ্টশক্তি-সম্বলিত পাঁচটি প্রধান উপায়ের কথা বলেছেন—পাঁচটি প্রধান উপায় হল :


১. হরিনাম সংকীর্তন করা।
২. শ্রীমদ্ভাগবত গিতা পাঠ।
৩. সর্বদা বৈষ্ণব সঙ্গ নেবার চেষ্টা করা। 
৪. মথুরা বা বৃন্দাবনে কাছাকাছি যাওয়া ও বসবাস করার চেষ্টা করা। 
৫. সর্বদা শ্রীমূর্তি বা কৃষ্ণের দেবসেবার উপাসনা করার চেষ্টা করা। 

৬. সংসার ধর্মের পাশাপাশি জীবসেবা ও দয়ালু মনোভাব সৃষ্টি করা। 

তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি জীব ভগবানের অংশ এবং সকলকে সমানভাবে ভালোবাসতে হবে। জীবের প্রতি দয়া ও করুণা প্রদর্শন করা আমাদের সকলের উচিত।

৬. অহঙ্কার ত্যাগ

তিনি অহঙ্কার এবং দম্ভ পরিত্যাগ করে বিনয়ের সাথে জীবনযাপনের উপদেশ দেন কারন ভক্তির জন্য বিনয় অপরিহার্য।

৭. প্রেমই চূড়ান্ত লক্ষ্য
তার উপদেশ সমূহ-কলিযুগ-ধর্ম হয় নাম-সঙ্কীর্তন । 

"চারিযুগে চারি ধর্ম-জীবের কারণ ।। 

অতএব কলিযুগে নামযজ্ঞ সার । 

অন্য ধর্মে তরে নাহি হয় পারাপার। ।।

রাত্রিদিন নাম লয় খাইতে শুইতে । 

তাঁহার মহিমা বেদে নাহি পারে দিতে ।। 

শুন, মিশ্র, কলিযুগে নাহি তপ-যজ্ঞ । 

যেই জন ভজে কৃষ্ণ, তাঁ’র মহাভাগ্য ।।

অতএব গৃহে তুমি কৃষ্ণভজ গিয়া । 

কুটিনাটি পরিহরি’ একান্ত হইয়া ।। 

সাধ্য-সাধন-তত্ত্ব যে-কিছু সকল । 

হরিনাম-সংকীর্তনে মিলিবে সকল ।। 

জয় হরে কৃষ্ণ, জয় কৃষ্ণ হরে,

চরণে রেখো মোর হৃদয় ঘরে।

জয় হরে রাম, প্রেম রসে ভরে,

রামনামে মন কাঁদে অন্তরে।

এই শ্লোক নাম বলি’ লয় মহামন্ত্র । 

ষোল নাম বত্রিশ-অক্ষর এই তন্ত্র ।। 

সাধিতে সাধিতে যবে প্রেমাঙ্কুর হবে । 

সাধ্যসাধন-তত্ত্ব জানিবা সে তবে ।।”

মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য  ১৪৮৬-১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দ লর্ড গৌরঙ্গের শিক্ষা ও জীবন

শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬-১৫৩৩) এক অন্যরকম হিন্দু সাধক মহাপুরুষ ছিলেন। কৃষ্ণ ভগবান, চৈতন্য মহাপ্রভুকে ভালোবাসা বিষয়ক ভক্তি যোগের স্কুলের সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তাও ছিলেন তিনি। তাঁর ভক্তরা তাঁকে গৌড়ীয় বৈষ্ণব নামে ডাকে, এটা একটা হিন্দু ঐতিহ্যেগত দলের মধ্যে অন্যতম দল একটি

 

চৈতন্য মহাপ্রভু রাস্তায় হরিনাম প্রচার এর ছবি
চৈতন্য মহাপ্রভু রাস্তায় হরিনাম প্রচার করছেন 

গৌরঙ্গের জন্ম আর তার মা-বাবা: শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু যিনি আবার অনেকের কাছে গৌরঙ্গ নামেও পরিচিত, ১৪২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক রাতে (চন্দ্রগ্রহণের সময়) পণ্ডিত জগন্নাথ মিশ্র আর শচী দেবীর ঘরে জন্ম নেন (১৪০৭ সালে ফাল্গুন মাসের ২৩ তম দিনে) তাঁর বাবা ছিলেন সিলেট থেকে আসা এক ব্রাহ্মণ, যিনি গঙ্গার ধারে নদীয়ার নবদ্বীপে থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন পণ্ডিত নীলাম্বর চক্রবর্তীর মেয়ে। তিনি ছিলেন তাদের দশম সন্তান, নাম রাখা হয় বিশ্বম্ভর। চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মের আগে তার মা অনেক সন্তান হারিয়েছিলেন। তাই, খারাপ নজর থেকে বাঁচাতে নিম গাছের নামে তার নাম রাখা হয়েছিল "নিমাই"। গায়ের রঙের জন্য প্রতিবেশীরা তাঁকে "গৌড়" বা "গৌরাঙ্গ" (গৌর = ফর্সা; অঙ্গ = শরীর) বলে ডাকতো। 

গৌরঙ্গের শিক্ষা: গৌরাঙ্গ অধ্যাপক বাসুদেব সার্বভৌমের কাছে 'নয়' নামে যুক্তিবিদ্যা পড়েন। এটা ছিল পুরনো ভারতীয় বিজ্ঞান। গৌরঙ্গের বুদ্ধি রঘুনাথের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যিনি ছিলেন যুক্তির বিখ্যাত বইয়ের লেখক। রঘুনাথ ভাবতেন তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলে- এমনকি শিক্ষকের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান। গৌরাঙ্গ ব্যাকরণ, সাহিত্য, দর্শন, ধর্মসহ সংস্কৃতির সব শাখায় পণ্ডিত ছিলেন। এরপর ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি 'টোল' খোলেন, যেখানে সাধারণত বয়স্ক অধ্যাপকরা থাকতেন। গৌরাঙ্গ ছিলেন দয়ালু আর শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তার একজন বন্ধু ছিল, যে খুব সহজ সরল ছিল। তারা দুজনে সাধারণ মানুষের মতো জীবন কাটাতেন। 

গৌরঙ্গের বাবার মৃত্যু আর বিয়ে: যখন গৌরাঙ্গ ছাত্র, তখন তার বাবা মারা যান। গৌরাঙ্গ তখন বল্লভাচার্যের মেয়ে লক্ষ্মীকে বিয়ে করেন। তিনি জ্ঞান অর্জন করেন এবং এক পণ্ডিতকে হারান। তিনি বাংলার পূর্বে যান এবং অনেক উপহার পান। ফিরে এসে শোনেন তার স্ত্রী সাপের কামড়ে মারা গেছেন। তারপর তিনি বিষ্ণুপ্রিয়াকে বিয়ে করেন। গৌরঙ্গের জীবনের মোড়: ১৫০৯ সালে, গৌরাঙ্গ সঙ্গীদের সাথে গয়ায় তীর্থ করতে যান। সেখানে তিনি ঈশ্বর পুরীর সাথে দেখা করেন, যিনি মাধবাচার্যের শিষ্য ছিলেন এবং তাঁকে গুরু মানেন। তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসে- তিনি ভক্ত হয়ে যান। পণ্ডিতের অহংকার চলে যায়। তিনি চিৎকার করে বলেন, "কৃষ্ণ, কৃষ্ণ! হারি বল, হারি বল!" তিনি হাসেন, কাঁদেন, লাফান এবং নাচতে থাকেন, মাটিতে গড়াগড়ি খান। ঈশ্বর পুরী তখন গৌরাঙ্গকে মন্ত্র দেন। মাঝে মাঝে গৌরাঙ্গ চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসতেন, আর তার কান্না লুকাতেন। কৃষ্ণের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অনেক গভীর। গৌরাঙ্গ বৃন্দাবন যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সঙ্গীরা তাকে নবদ্বীপে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

 

গৌরাঙ্গ সন্ন্যাসী হলেন: শিক্ষিত লোকেরা গৌরাঙ্গকে ঘৃণা করত। কিন্তু তিনি হঠাৎ সন্ন্যাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভাবলেন, "এই পণ্ডিতদের বাঁচাতে, আমাকে সন্ন্যাসী হতে হবে। তারা যখন আমাকে দেখবে, তখন সম্মান করবে, এবং তাদের মন শুদ্ধ হবে।" তাই, ২৪ বছর বয়সে, গৌরাঙ্গ 'কৃষ্ণ চৈতন্য' নামে স্বামী কেশব ভারতীর কাছ থেকে দীক্ষা নেন। তাঁর মা শচী দেবী কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু চৈতন্য তাঁকে সান্ত্বনা দেন। তিনি মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছিলেন। গৌরাঙ্গ একজন মহান প্রচারক হলেন। তিনি বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেন। নিত্যানন্দ, সনাতন, রূপ, স্বরূপ দামোদর, অদ্বৈতচার্য, শ্রীবাস, হরিদাস, মুকুন্দ, গদাধর অন্যরা চৈতন্যকে সাহায্য করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর উপদেশ।

কৃষ্ণ চৈতন্যের তীর্থযাত্রা:

চৈতন্য আর তার বন্ধু নিতাই দুজনে মিলে উড়িশার দিকে হেঁটে চললেন। তিনি যেখানেই যেতেন, বৈষ্ণব ধর্মের কথা বলতেন আর ধর্ম নিয়ে নানা আলোচনা করতেন। যেখানে যেতেন, সেখানেই হাজার হাজার মানুষ তাকে দেখতে আসত। কিছু দিন তিনি পুরীতে ছিলেন, তারপর দক্ষিণ ভারতের দিকে চলে যান। গৌরাঙ্গ তিরুপতি পাহাড়, কাঞ্চিপুরম আর কাবেরী নদীর ধারে শ্রীরাঙ্গম দেখতে যান। শ্রীরাঙ্গম থেকে তিনি যান মদুরাই, রামেশ্বরম আর কন্যাকুমারীতে। এরপর তিনি যান উডুপি, পন্ধরপুর আর নাসিকে। উত্তরে তিনি বৃন্দাবনে যান, যমুনা নদীতে নাচেন আর অনেক মন্দিরে গিয়ে পূজা করেন।

 

তিনি মনে শান্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতেন আর আনন্দে নাচতেন। নিজের জন্মস্থান নবদ্বীপও তিনি ঘুরে আসেন। শেষে গৌরাঙ্গ পুরীতে ফিরে এসে সেখানেই থাকতে শুরু করেন।

 

চৈতন্য মহাপ্রভুর শেষ দিনগুলো:

চৈতন্য তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান পুরীর কাছে, বাংলার উপকূলে। বাংলা, বৃন্দাবন অন্যান্য জায়গা থেকে অনেকে তাকে সম্মান জানাতে পুরীতে আসেন। গৌরাঙ্গ রোজ কীর্তন করতেন এবং ধর্মের কথা বলতেন। একদিন, খুব ভক্তি ভরে তিনি যমুনা নদীকে সমুদ্র ভেবে বাঙ্গালীর উপকূলে স্নান করতে নামেন। হঠাৎ তিনি জলের মধ্যে কিছু একটা পান। জেলেরা খুব খুশি হয় যে তারা একটা বড় মাছ ধরেছে, তাই তারা জাল টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা দেখে যে সেটা একটা মানুষের লাশ, তখন তারা ভয় পেয়ে যায়। লাশ দেখে জেলেরা ভয় পেয়ে সেটা ফেলে দেয়। কাঁপতে কাঁপতে তারা পাড়ে এসে দেখে স্বরূপ আর রমনাদ তাদের খুঁজতে বেরিয়েছে। স্বরূপ তাদের জিজ্ঞাসা করলে জেলেরা সব কথা খুলে বলে। তখন স্বরূপ আর রমনাদ তাড়াতাড়ি গিয়ে গৌরাঙ্গকে জাল থেকে বের করে মাটিতে রাখে। তারা হরি নাম গাইতে শুরু করলে গৌরাঙ্গর জ্ঞান ফিরে আসে। মৃত্যুর আগে গৌরাঙ্গ বলেন, কলিযুগে কৃষ্ণ নামই মুক্তির পথ। বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে, খেতে, সবসময় কৃষ্ণ নাম জপ করতে হবে। ১৫০৪ সালে গৌরাঙ্গ মারা যান।

 

শ্রী চৈতন্যের বাণী প্রচার:

বিশ শতকে চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা আবার জেগে ওঠে এবং এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ তা পশ্চিমে নিয়ে যান। তিনি শ্রীচৈতন্যের আরেক রূপ ছিলেন বলে মনে করা হয়। তিনি ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন, যা সারা বিশ্বে চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি 'হরে কৃষ্ণ' মন্ত্র ছড়িয়ে দেয়। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত চৈতন্য ভাগবত পড়লে আমরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপা সম্পর্কে জানতে পারব।    

এখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু দেখিয়েছেন কিছু অদ্ভুত জ্ঞান, যা আমাদের নিতে হবে;

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কলির যুগে হরিনাম সংকীর্তন ছড়ান। সবাই নাম জপ করে শুদ্ধ হতে পারে, নামের জাদু অনুভব করতে পারে, কোনো যোগ্যতা ছাড়াই।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শুদ্ধ হওয়ার সেরা রাস্তা দেখিয়েছেন। তাঁর দেখানো পথে সরাসরি ঈশ্বরের সাথে যোগ দেওয়া যায়, তাঁর শিক্ষা বেদের সাথেও মেলে।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এক নতুন আধ্যাত্মিকতার শুরু করেন। এতে জাতি-ধর্ম দেখা হয় না, সবাই শিখতে পারে। তিনি খারাপ লোকদেরও ভালো করে উদাহরণ সৃষ্টি করেন।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিজে ভালোবেসে কৃষ্ণকে পাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। ভক্তরা যেন কৃষ্ণ ভক্তি পায়, তাই তিনি ভগবানের নিয়ম প্রচার করেছেন।

) শ্রীকৃষ্ণ গীতায় ভক্তিযোগের কথা বলেছেন, আর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু দেখিয়েছেন প্রেমের যোগ। এতে মানুষ কৃষ্ণকে ভালোবাসতে পারে। এমন প্রেমের সময় আগে আসেনি। মহাপ্রভুর দয়ায় পাপ দূর হয়।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভুল মতবাদ গুলোকে হারিয়েছেন, কিন্তু কাউকে কষ্ট দেননি। তাই সবাই হরিনাম জপ করে, এই নামকে মানে।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রায় হারাতে বসা বৈদিক ধর্মকে বাঁচিয়েছেন। তাঁর আগে অনেকে ধর্ম ছাড়তে বাধ্য হতো, যা তিনি বন্ধ করেন।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জাতি না দেখে সবাইকে কৃষ্ণ প্রেম দিয়েছেন, কুসংস্কার দূর করেছেন। তিনি শিষ্যদের শিক্ষা দিতেন, তারা শাস্ত্র লিখে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কৃপা করে সবাইকে প্রেম দিয়েছেন, যা শোধ করা যায় না।

) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বেদের শিক্ষা আবার চালু করেছেন এবং বলেছেন তাঁর কথা সারা বিশ্বে ছড়াবে। এখন সেটাই হচ্ছে। তাঁর ছোঁয়ায় অনেকে বদলে গেছে, যা আগে কখনো হয়নি। তাঁর কথাতেই ধর্ম বোঝা যায়। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু শিখিয়েছেন, ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। তিনি জীবনভর এই বার্তা দিয়েছেন, ভক্তদের কৃষ্ণপ্রেমে পাগল করেছেন।


Post a Comment

0 Comments