Posts

হিন্দু বিবাহ রীতি: সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে গাইড (বাংলায়)

Image
হিন্দুধর্মের মধ্যে বিয়ে সামাজিক নিয়মের পাশাপাশি ধর্মীয় নিয়মকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। আজ আমি কিছু নিয়মের কথা বলছি আমাদের বিয়ের মাধ্যমে। যদিও এ সব নিয়ম অনেকেরই জানা আছে। হিন্দু ধর্মে বিবাহ একটা পবিত্র অনুষ্ঠান। এটা শুধু সামাজিক বা আইনগত ব্যাপার না , ধর্মীয় দিক থেকেও এর গুরুত্ব অনেক। যদিও বিবাহের নিয়ম - কানুন কিছুটা ভিন্ন হতে পারে এলাকায় বা সম্প্রদায়ে , মূল বিষয়গুলো প্রায় একই থাকে। হিন্দু বিবাহ রীতি অষ্টবিধ বিবাহ – হিন্দু ধর্মে ৮ ধরনের বিবাহরীতি হিন্দু ধর্মে মোট ৮   ধরনের বিয়ের রীতি আছে। এগুলো হল : ব্রাহ্ম , দৈব , আর্জ , প্রাজাপাত্য , আসুর , গান্ধর্ব , রাক্ষস   ,   পৈশাচ । এগুলোর কথা মনুসংহিতায় বলা হয়েছে , কিন্তু বেশিরভাগই এখন আর প্রচলিত নয়। আজকালকার বাঙালি হিন্দু সমাজে প্রাজাপাত্য বিয়ে দেখা যায়। দেবতা প্রজাপতিকে বিয়ের দেবতা হিসাবে মানা হয় , তাই এই বিয়ের নামেরও তার নাম অনুসারে রাখা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বর তার পরিচিত লোকদের নিয়ে কনের বাড়িতে যায় এবং সেখানে বিয়ে করে , পরে...

ঈশ্বর কেন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? ধর্মীয় ও দার্শনিক ব্যাখ্যা

Image
 ঈশ্বর কেন এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন? — এই প্রশ্নটি অনেক পুরনো এবং বিভিন্ন দর্শন, ধর্ম এবং আধ্যাত্মিক প্রথায় এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থ ও দর্শনে এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।  ঈশ্বর কেন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন 👉ব্যাখ্যা ১_ এটি অনেকের জন্য একটি সাধারণ প্রশ্ন : ঈশ্বর কেন এই পৃথিবীটি তৈরি করেছেন ? বিষয়টিকে সহজ করে বলতে গেলে , এটি বেশ বড় এবং অনেকের পক্ষে বোঝা কঠিন হতে পারে। তাই আমি এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। প্রাচীন বেদ অনুযায়ী , দুটি জগত আছে — একটি আধ্যাত্মিক এবং একটি বস্তুগত , যেখানে আমরা আছি। বেদে আধ্যাত্মিক জগতের সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায় , যেখানে স্বর্গের চিত্র এবং ঈশ্বরের রাজ্যের বর্ণনা দেয়া আছে। যোগ দর্শনে পতঞ্জলি মুনির ব্যাখ্যা আমাদের এই বিষয়ে অনেক সুন্দর ধারণা দেয়। যেকোনো কাজের তিনটা কারণ হয়। নিমিত্ত কারণ , উপাদান কারণ , আর সাধারণ কারণ। নিমিত্ত কারণ হলো কর্তা (who), উপাদান কারণ হলো কাজটা (what), এবং সাধারণ কারণ হলো কেন (why) করতে হচ্ছে।...

রিপু নিয়ন্ত্রণের উপায়: আত্মোন্নতির পথে সাত বাধা

Image
সংস্কৃত শব্দ 'রিপু' মানে শত্রু। হিন্দু দর্শন ও ধর্মশাস্ত্রে, রিপু হল সেই মানসিক বা চারিত্রিক দুর্বলতাগুলো যা মানুষের আত্মোন্নতির পথে বাধা দেয়। এগুলোকে ‘অন্তঃশত্রু’ বা ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু’ বলা হয়। ষড়রিপুঃ ষড়র মানে ছয় আর রিপু মানে শত্রু যদিও অনেক ক্ষেত্রে সাতটির কথা উল্লেখ পাওয়া গেছে। তাই ষড়রিপু হলে ছয়টা শত্রুর কথা বলা হচ্ছে। যখন মানুষের মন এই শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন সে অনেক ভুল কাজ করে ফেলে, যা পরে পাপ হিসেবে ধরা হয়। এই ছয়টা শত্রু হল: কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ এবং মাৎসর্য। ষড়রিপু ১. কাম – ইন্দ্রিয়সুখ বা কামনা (lust)- সাধারণত কামনা বা ভোগের ইচ্ছাকে বোঝায় কাম রিপু । যখন মানুষ জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত কিছুর দিকে আকৃষ্ট হয়, তখন সেটি কাম বলা হয়। এছাড়া, যেকোনো ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ বা তার শরীর ভোগ করার ইচ্ছাকেও কাম হিসেবে ধরা হয়। এই কাম রিপুই আমাদের জীবনে অন্যান্য পাঁচটি রিপুর সৃষ্টি করে। 👉 কাম রিপু থেকে মুক্তির উপায়: কাম প্রথমে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো দিয়ে মন এবং বুদ্ধিকে আকৃষ্ট করে। ইন্দ্রিয়, মন এবং বুদ্ধি হল এই রিপুর আবাস। তাই প্রথমে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত...

অক্ষয় তৃতীয়া কি? কেন পালন করা হয়? ইতিহাস, তাৎপর্য ও পূজার নিয়ম

Image
অক্ষয় তৃতীয়াকে অনেকে আকতি বা আখা তীজও বলে , যেমন ঝাড়খণ্ডের মান্দা এক বিশেষ হিন্দু ও জৈন উৎসব। এটা প্রতি বছর আসে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনে এই উৎসব হয়। ভারত , নেপাল ও ঝাড়খণ্ডের কিছু মানুষ একে ভালো দিন মনে করে। অক্ষয় মানে যা কখনো শেষ হয় না। অক্ষয় তৃতীয়া এই বিশেষ দিনে কোনো ভালো কাজ করলে তার ফল সব সময় পাওয়া যায়। তাই একে " সদা উন্নতির দিন " বলা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা চাঁদের হিসাবে চলে , তবে তারিখ ঠিক করতে চন্দ্র মাস দেখা হয়। একটা চন্দ্র দিন মাস , পক্ষ ও তিথি দিয়ে বোঝা যায়। মাস বলার সময় দুটো নিয়ম চলে : আমন্ত ও পূর্নিমান্ত। কোনো উৎসব চাঁদের খারাপ সময়ে হলে , এই দুই নিয়মে আলাদা মাসে পড়ে কিন্তু দিনটা একই থাকে। একটা চন্দ্র বছর সূর্যের বছরের থেকে প্রায় এগারো দিন ছোট হয়। তাই অনেক হিন্দু উৎসব ইংরেজি ক্যালেন্ডারে আলাদা দিনে হয়। তখনই আমরা লাভ করতে পারি যখন ভালো কিছু করি , আর যদি খারাপ করি তবে অক্ষয...

ধর্মমতে জন্মদিন পালন

Image
এই সু্ন্দর পৃথিবীতে অনেকেই আমরা আমাদের জীবনে নিজের ও আপনজনদের জন্মতিথি, জন্মদিবস বা জন্মদিন পালন করে থাকি।আধুনিক এই পৃথিবীতে তথা কলি যুগে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্নভাবে ও ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে পালন করে থাকি। যদিও কিছু সংখ্যক ধর্মানুরাগী মানুষ নিজের ইষ্ট কে ভোগ নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করেন আবার কেউবা পায়েস বা কেক কেটে নিজেদের জন্মদিন পালন করেন তাছারাও বর্তমানে আমরা অনেকেই নানা রকম রাজকীয় পদ্ধতি জন্মদিন পালন করে থাকি।কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সকল আনন্দ এবং উৎসবের কথা আমাদের মনে থাকলেও , হাজার আড়ম্বরপূর্ণ ব্যস্ততার মাঝে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা কে ভুলেই যাই। ধর্মমতে জন্মদিন পালন ধর্মমতে জন্মদিন পালনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহের ব্যাখ্যা: জন্মদিনে বৈদিক আচার অনুসারে পরমেশ্বরের কাছে যজ্ঞের মাধ্যমে প্রার্থনা করা আমাদের কর্তব্য। বিদ্যা, তেজ, বলবুদ্ধি ও পথপ্রদর্শন লাভের জন্য, দীর্ঘ ও সুখময় জীবন কামনায়, লাভ-ক্ষতির বিবেচনায় দুষ্কর্ম, দুর্গুণ ও দুর্ব্যবহার ত্যাগ করে সৎকর্ম, সদ্গুণ ও সদাচরণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করা উচিত। আজ আমি এমনই কিছু সহজ ও সংস্কারমূলক বৈদিক যজ্ঞমন্ত্র উল্লেখ করছি, য...