সম্পদ কাকে বলে? শ্রেণীবিভাগ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা

সম্পদ হচ্ছে একটি দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। যে দেশে যত সম্পদ মজুদ আছে অথবা সংরক্ষিত ভান্ডার হিসাবে রক্ষিত  আছে সে দেশি  অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক  ভাবে তত বেশি শক্তিশালী। সম্পদ শুধুমাত্র  প্রকৃতিপ্রাপ্ত  থাকে না  মনুষ্য সৃষ্ট সম্পদ ও   তৈরী করতে দেখা যায়। তাই বলা যায়, সম্পদ হচ্ছে সম্ভাব্য সম্পদ এবং বাস্তবে যে সম্পদ বিকাশ লাভ করছে এ দুয়ের পার্থক্য। আলোচনায় সম্পদের  তিনটি সমার্থক শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় ।যথা- মজুদ ,  সম্পদ এবং সংরক্ষিত  ভান্ডার। যা সম্পদের প্রকৃতি (Nature) হিসাবেও পরিচিত। 

সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের ছবি

সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের ছবি 



সম্পদ বলতে কি বুঝায়- সম্পদ অটল বা সুবির নয়। সময় অনুসারে আবার স্থায়ীও নয়।  আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষারাটে সম্পদ প্রকৃতপক্ষে গতিমান।

কোন কিছুই  সম্পদ হিসাবে গণ্য হয় না যতক্ষন পর্যন্ত না তার কার্য-কারিতা সৃষ্টি হয়। সাধারণ অর্থে, বস্তুর কার্যকারিতা বলতে অভাব মোচনের ক্ষমতাকে বুঝায় যা মানুষের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।

সম্পাদ বিশারদ zimmerman (১৯৫১) এর মতে" স্বতন্ত্র  বা একক  বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি  করে সম্পদের এক প্রকার সংজ্ঞা প্রদান করা যেতে পারে তবে  বস্তুর রূপান্তর করে উপযোগ বা কার্যকারিতা সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পদে পরিনত হওয়া সম্পর্কে একটি সার্বজনীন প্রচলিত ধারণা রয়েছে ।

মানুষ তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জ্ঞান ও বুদ্ধি খাটিয়ে জড় শক্তির সাহায্যে প্রকৃতি প্রদত বিভিঘ্ন বস্তুকে সম্পদে পরিণত করে। সুতরাং সম্পদ বলতে কোন বস্তুর রাপান্তর করে তার উপযোগীতা সৃষ্টি করাকে বুঝায়।


উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, যখন কোন বস্তু মানুষের আশা-আকাঙ্খা, চাহিদা, চরিতার্থ করার উপযোগী হয় না তার কার্যকারীতা অর্থনীতিতে স্বীকৃত হয় কখনোই তা সম্পদ আমার বলে গণ্য হয়। এ প্রসঙ্গে Zimmerman এর একটি উদ্ধৃতি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য তার বক্তব্যটি হল, প্রাকৃতিক, মানবিক এবং সাংস্কৃতিক পরিসম্পত্তির ত্রিমাত্রিক মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল সম্পদের উদ্ভব হয়।

সম্পদের প্রকারভেদঃ মানুষের দৃষ্টিকোন, প্রকৃতি ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে সম্পদকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ-

1. প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural Resources)

২. সাংস্কৃতিক সম্পদ এবং (Cultural Resources)

3. অর্থনৈতিক সম্পদ। (Economic Resources) পাওয়ার অধিকারের  ও ভোগের তারতম্য অনুসারে  সম্পদকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

১.ব্যক্তিগত সম্পদ 
২.জাতীয় সম্পদ এবং
৩. পৃথিবীর সম্পদ
নিম্নে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

1. প্রাকৃতিক সম্পদঃ প্রকৃতি প্রদত প্রায় সকল বস্তু্ুই   প্রাকৃতিক সম্পদ বলে বিবেচিত। তবে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে পরিবেশবিদ Zimmerman প্রাকৃতিক সম্পাদকে দুটি শ্রেনীতে বিভক্ত করেছেনঃ-


# অজৈব সম্পদ যেমন সূর্যালোক,বায়ু,পানি।
# জৈব সম্পদ যেমন জীবজন্তু,মাছ,উদ্ভিদ ইত্যাদি


# অজৈব সম্পদঃ প্রকৃতি থেকে আসা সূর্যের আলো, পানি, বায়ু 

প্রভৃতি পেয়ে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার খনিজ-যেমন-গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রভৃতিও পেয়ে থাকি। প্রানহীন হওয়ায় এগুলোকে অজৈব পদার্থ বলে। মানুষ যখন নিজস্ব প্রায়াজানে ঐ সব অজৈব পদার্থকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে তখন তা সম্পদ বলে গণ্য হয়।

#জৈব সম্পদ  (Organic Resources):- প্রকৃতি থেকে প্রান বিশিষ্ট বিভিন্ন প্রকার জীবজন্তু, মাদ, গাছ, তৃণ, লতা গুল্ম প্রভৃতি পাওয়া যায়। এগুলো নানাভাবে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় ।তাই এগুলিকে সম্পদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

উল্লেখ্য যে, প্রকৃতি থেকে পাওয়া মাটি এমন একটি মৌলিক সম্পদ যা জৈব ও অজৈব উভয় প্রকার উপাদান দ্বারা গঠিত। কাজেই মৃত্তিকা উভয় ধরনের সম্পদ হিসাবে পরিচিত।

Zimmerman প্রাকৃতিক সম্পাদকে আবার স্থায়িত্যের তারতম্য অনুসারে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথাঃ
১.অফুরন্ত সম্পদ
২.নবায়নযোগ্য
৩.অনবায়নযোগ্য সম্পদ।


অফুরন্ত সম্পদঃ (Inexhaustible Resource): (ইন হেক্সিউজটিরল রিসোর্স) সে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ অনবরত ব্যবহারের ফালেও ফুরিয়ে যাওয়ার বা ক্ষয়প্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না সেগুলোকে অফুরন্ত সম্পদ বা Inexhaustible Resource বলে। যেমন- সূর্যকিরণ, বাতাস, পানি প্রভৃতি কখনোই নিঃশেষিত হয় না।

নবায়নযোগ্য সম্পদ (Renewable Resources):- যে সকল সম্পদের যোগান সীমিত এবং ব্যবহারের দ্বারা কমে গেলেও ব্যবহার শেষে পুনরায় বৃদ্ধি করা যায় তাকে নবায়নযোগ্য সম্পদ বা Renewable resources বলে। যেমন- কাঠ, মৎস্য সম্পদ এবং গরু , মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি প্রাণী সম্পদ ব্যবহার শেষে পুনরায় বৃদ্ধি করা যায়।

অনবায়নযোগ্য সম্পদ( Not Rewnewable resources)- যে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ফলে  স্থায়ীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত  হয়ে শেষ পর্যন্ত একেবারে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায় তাকে অনবায়ন যোগ্য সম্পদ বলে। যেমন- পেট্রোলিয়াম, লৌহ আকরিক, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ।

সাংস্কৃতিক সম্পদঃ জ্ঞান - বিজ্ঞান, প্রযুক্তিগত জ্ঞানের উন্নতি, মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশ ও প্রয়োগকে সাংস্কৃতিক সম্পদ বলে। সাংস্কৃতিক সম্পদের অভাবে সম্পদের বিকাশ ব্যাহত হয়। পৃথিবীর যে সকল স্থানে মানুষের সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করেনি সেখানে সাংস্কৃতিক সম্পদের উন্নয়ন ঘটেনি। যেমন- আমাজান অববাহিকার রেড ইন্ডিয়ান একং কঙ্গো অববাহিকায় পিগমি অধিবাসীরা এই শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। আবার সে সব স্থানে মানুষের সংস্কৃতি বিকাশ ঘটেছে অর্থাৎ সংস্কৃত সম্পন্ন মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সাংস্কৃতিক সম্পদের সংযোগ সাধন করেছে। তাই বলা যায়, মানুষের চিন্তা জগৎ থেকে যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা উদ্ভব হয়েছে এবং সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন  সম্পদের সৃষ্টি করে নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়েছে তাই সাংস্কৃতিক সম্পদ বলে পরিগণিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পদ:  উৎপাদক ও ভোক্তা হিসাবে মানুষ যখন বস্তুর কারকিারীতা বা উপযোগীতা সৃষ্টি করে তখন ঐ সব বস্তুকে অর্থনৈতিক সম্পদ বলা হয়। জনসংখ্যার বিন্যাস ও ঘনত্ব, শ্রমের যোগান ও উৎকর্ষ অর্থনৈতিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে শ্রমিক ও ভোক্তার প্রাচুর্য দেখা যায়। এর অভাবে অর্থনৈতিক সম্পদের বিকাশ ব্যাহত হয়। যেমন- অস্ট্রেলিয়ার প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও  শ্রমিক বা জনসংখ্যা কম থাকার প্রাকৃতিক সম্পদ যথোপযুক্ত ভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। পক্ষান্তরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং ইউরোপের  উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী থাকায় শ্রমের যোগান নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব করেছে।

উপসংহারে বলা যায় যে, পৃথিবীতে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্পর্কে মানুষের আকাঙ্খা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে  সম্পদের ব্যবহারের মাত্রা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্য বৃদ্ধির পরীপ্রেক্ষিতে ও উন্নতমানের জীবন যাপনে সম্পদের চাহিদা যদি সূচকীয় ভাবে বা চত্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে তাহলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে  সেটাই হবে আগামী বিশ্বে সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। 


Post a Comment

0 Comments